জল ও জলের প্রয়োজন



আমাদের ভারতবর্ষে মাথাপিছু জলের পরিমাণ আজ বছরে 1800 ঘনমিটার, কিন্তু 60 বছর আগে এই পরিমাণ ছিল 5000 ঘনমিটার। জল জনিত সমস্যা তাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতবর্ষে জটিল অবস্থার সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দেশে জলবণ্টন ও ব্যবহার যেভাবে হয়ে চলেছে, তার পরিবর্তন সঠিকভাবে না করলে 2050 সালে মাথাপিছু জলের পরিমাণ কমে বছরে 1000 ঘনমিটার হবে।

জল প্রাকৃতিক সম্পদ হলেও প্রকৃতিতে জলের পরিমাণ খুবই সীমিত। প্রকৃতির ?? সংরক্ষণের জন্য যেমন জলের প্রয়োজন তেমনই এই পৃথিবীর সমগ্র জীবকূলের জীবনযাত্রা রক্ষার জন্য মানুষের কাছে জলের গুরুত্ব অপরিসীম। জলের প্রয়োজন গার্হস্থ কাজে, সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু যেহেতু প্রকৃতিতে জলের পরিমাণ সীমিত, সে কারণে মাথা পিছু জলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আমাদের ভারতবর্ষে মাথাপিছু জলের পরিমাণ আজ বছরে 1800 ঘনমিটার, কিন্তু ৬০ বছর আগে এই পরিমাণ ছিল 5000 ঘনমিটার। জল জনিত সমস্যা তাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতবর্ষে জটিল অবস্থার সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দেশে জলবণ্টন ও ব্যবহার যেভাবে হয়ে চলেছে, তার পরিবর্তন সঠিকভাবে না করলে 2050 সালে মাথাপিছু জলের পরিমাণ কমে বছরে 1000 ঘনমিটার হবে এবং যে অবস্থার ভয়াবহতা সহজেই অণুমেয়।

প্রতি বছরে, প্রাকৃতিক কারণে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে আমরা পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ জল পেয়ে থাকি। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিমাণের। আবহাওয়াজনিত কারণে বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটে। ভারতবর্ষে প্রতি বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 800 মিলিয়ন হেক্টমিটার। এই বৃষ্টিপাত ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ উত্স থেকে যথাক্রমে 43 মিলিয়ন হেক্টমিটার এবং 187 মিলিয়ন হেক্টমিটার হিসাবে স্থাপিত হয়। ভারতবর্ষে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্ব্বোচ্চ 11000 মিমি। এবং সর্বনিম্ন 100 মিমি। ফলে রাজস্থানের বেশ কিছু অঞ্চলে জনপিছু বার্ষিক জলের পরিমাণ 500 ঘনমিটারের কম এবং সে কারণে জলসমস্যা অত্যন্ত জটিল।

আমাদের দেশে মাথাপিছু বরাদ্দ জলের শতকরা 8.5 ভাগ কৃষিকার্যে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কলকারখানায় এবং তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে শতকরা 10 ভাগ জল যোগান দিতে হয়। অবশিষ্ট শতকরা 5 ভাগ জল আমাদের গার্হস্থ কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে জলের প্রয়োজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারীস্তরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জল সমস্যা সমাধানের জন্য এক সার্বিক কর্মসূচী গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি এবং এই কর্মসূচীতে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

আমাদের দেশে গার্হস্থ জল সরবরাহ ব্যবস্থা ভূগর্ভস্থ থেকে করা হয়। এছাড়া কিছু কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হয়। ভারতবর্ষে প্রায় শতকরা 85 ভাগ গ্রামীণ এলাকায় জল সরবরাহের মূল উত্স ভূপৃষ্ঠের জল। যেমন ঝর্না, হ্রদ ইত্যাদি। দেশের বড় বড় শহরে মূলত ভূপৃষ্ঠের জল সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের অনেক ছোট এবং মাঝারি শহরে এখনও ভূগর্ভস্থ জল সরবরাহ করা হয়।

দেশের বহু অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহৃত হয়। বৃষ্টির জল প্রাকৃতিক উপায়ে ভূগর্ভে পুনস্থাপিত হয়। কিন্তু এই জল পুনস্থাপনের পরিমাণ সীমিত। ফলে বহু অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জল এত পরিমাণে উত্তোলন করা হচ্ছে যা পুনস্থাপিত পরিমাণের থেকে অনেক বেশি। এই কারণে ভূগর্ভস্থ স্তরে জলের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, জলস্তর নীচে নেমে যাচ্ছে এবং গার্হস্থ কাজের প্রয়োজনীয় জল ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রীষ্মের প্রারম্ভের বহু নলকূপ থেকে জল উঠছে না এবং ফলস্বরূপ বহু অঞ্চলে জল সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। অত্যধিক জল উত্তোলনের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের গুণাগুণের পরিবর্তন ঘটেছে এমনকি বহু অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলে দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে এবং সে কারণে জলের পানীয় রূপে গ্রহণযোগ্যতা ব্যাহত হচ্ছে।

গার্হস্থ কার্যে জলের প্রয়োজন গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে অনেক বেশি। ভারত সরকারের শহর উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশ অনুয়ায়ী বড় বড় শহরে (দিল্লী, কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু প্রভৃতি) মাথাপিছু জলের ন্যুনতম চাহিদা প্রতিদিনে 150 লিটার। অন্যান্য শহরে যদি ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী থাকে অথবা খুব নিকট ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী নির্মাণের কর্মসূচী থাকে তবে ঐ শহরগুলির জনপিছু জলের ন্যুনতম চাহিদা দৈনিক 70 লিটার। নগরবাসীর ন্যুনতম জলের চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব পুরসভাগুলির উপর ন্যস্ত। ভারত সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের জল সরবরাহের পরিমাণ জন পিছু দৈনিক ন্যুনতম 40 লিটার। কিন্তু মরুভূমি অঞ্চলে এই চাহিদার পরিমাণ দৈনিক 70 লিটার। গ্রামাঞ্চলে জল সরবরাহের দায়িত্ব মূলত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর এবং গ্রামীণ পঞ্চায়েত দপ্তরের উপর ন্যস্ত।

অবসরপ্রাপ্ত ডিরেকটর, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ এন্ড হাইজিন

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading