পুরুলিয়া জেলার জলছবি


এই বড় বড় বাঁধ বা দিঘিগুলি ছাড়াও পুরুলিয়ায় রয়েছে বহু জলাশয়। আছে ছোট বড় মাঝারি নানা ধরণের পুকুর। এর মধ্যে একটি পুকুরের উল্লেখ করা যেতেই পারে। পাড়া থানার রামকৃষ্ণপুরের একটি পুকুর। এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেকটা মজে গেলেও গ্রামের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সূত্র থেকে জানা যায় এক সময় এই পুকুরটি এতো বড় ছিল যে এই পুকুরে কুমির বাস করত।

পুরুলিয়ার পি. এন. ঘোষ স্ট্রিটের বাসিন্দা বিশ্ববিখ্যাত অলোক শিল্পী শ্রীযুক্ত সন্তোষ রাজগোড়িয়ার মতে পুরুলিয়া শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতবর্ষের সুন্দর সুন্দর জেলাগুলির মধ্যে পুরুলিয়া হল একটি অন্যতম অত্যন্ত সুন্দর জেলা। এখানের প্রকৃতি অকৃপন। শিল্পীর চোখের এই সৌন্দর্য কিন্তু পুরুলিয়ার অনেক মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। সাধারণ মানুষ বলে এই জেলা রুক্ষ্ম। এই জেলার সাথে ধু-ধু প্রান্তরের যেন গাঁটছড়া বাঁধা। শুখা নামক এক দৈত্যের হাত থেকে যেন পুরুলিয়া কিছুতেই নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। গত দু-বছর পুরুলিয়ার মানুষকে জলহীনতা দেখতে হয়েছে। অথচ এ রকম হওয়ার কথা নয়। পুরুলিয়ার বৃষ্টিপাত খুব একটা কম নয়। এই জেলায় বৃষ্টিপাতের মোট পরিমাণ বাত্সরিক ১২৪৭ মিলিমিটার। এই পরিমান বৃষ্টিপাতযুক্ত জেলাকে কখনই কম বৃষ্টিপাতযুক্ত জেলা বলা যায় না। পুরুলিয়ার নদী নালার সংখ্যা খুব একটা কম নয়। কথার জাল বিস্তার না করে যদি আমরা একটু অন্য রকম করে দেখতে চাই অর্থাত আর একটু তথ্য নির্ভর আলোচনা করতে গেলে বলতে হয়-

পুরুলিয়া জেলার প্রধান নদীর সংখ্যা সাতটি (৭)। এই নদীগুলি হল- দামোদর, কংসাবতী, সুবর্ণরেখা, কুমারী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী এবং টটকো। এই প্রধান নদীগুলি অর্থাত বড় নদীগুলি ছাড়াও রয়েছে ২১টি আরও ছোট ছোট নদী। আমাদের বোঝার সুবিধার জন্য যদি এই নদীগুলিকে থানা অনুযায়ী দেখতে চাই তাহলে দেখব - হনুমতি বয়ে চলেছে বরাবাজার থানায়। বেকো আছে কাশীপুর থানায়। উত্লার দেখা পাওয়া যায় নিতুরিয়া থানায়। পাঁড়গা নামের ছোট নদীটিকে পাওয়া যায় জয়পুর থানায়। এছাড়া রুপাই আছে ঝালদা থানাতে। পাতলই হল আড়ষা থানার নদী। জাম নদীটি বয়ে ছলেছে মানবাজার থানা দিয়ে। শাখা হল বাগমুণ্ডী থানার অন্তর্গত একটি ছোট নদী। তারা নদীটির গতিপথ পুরুলিয়া মফস্বল থানার এলাকার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়াও রয়েছে কারকু, লাঙ্গাসাই, শোভা, কুদলুং, তসের কুয়া, কদমদা, চাকা, হাড়াই, গোয়াই, বান্দু, শালদা এবং পাতলই।

এই ছোট ছোট ও বড় বড় নদীগুলি বাদ দিয়েও পুরুলিয়ার এক একটি পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে কম করে গড়ে ৩-৪ টি করে জোড়।

এ সবের পরও পুরুলিয়ায় জল সঞ্চয় করে রাখার জন্য রয়েছে বড় বাঁধ বা দিঘি। এই বড় বাঁধ বা দিঘির সংখ্যাও কিন্তু পুরুলিয়া জেলায় এক নয়, একাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল – সাহেব বাঁধ (পুরুলিয়া), সাহেব বাঁধ (আদ্রা), সাহেব বাঁধ (আনাড়া), রাণি বাঁধ (জয়পুর), বেড়োর বাঁধ (রঘুনাথপুর থানা), হরিশ্চন্দ্র সায়ের (নিতুড়িয়া), বেড়োর বাঁধ (রঘুনাথপুর থানা), জামদার বাঁধ (বলরামপুর থানা) প্রভৃতি। এই বড় বড় বাঁধ বা দিঘিগুলি ছাড়াও পুরুলিয়ায় রয়েছে বহু জলাশয়। আছে ছোট বড় মাঝারি নানা ধরণের পুকুর। এর মধ্যে একটি পুকুরের উল্লেখ করা যেতেই পারে। পাড়া থানার রামকৃষ্ণপুরের একটি পুকুর। এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেকটা মজে গেলেও গ্রামের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সূত্র থেকে জানা যায় এক সময় এই পুকুরটি এতো বড় ছিল যে এই পুকুরে কুমির বাস করত।

শুধু পুরোনো বা ইতিহাসের সাক্ষ বহনকারী নদ নদী বা পুকুরই নয়, বর্তমানেও চলছে জল ধারক বিভিন্ন ধরণের বড় জলাধার বা ড্যাম নির্মিনের কাজ। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের মতো বা অন্যভাবে বললে বলা যায় পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার মতো পুরুলিয়াতেও সরকারি উদ্যোগে বড় জলাধার বা ড্যাম নির্মিত হয়েছে। সংখ্যাটা নগন্য নয়। পুরুলিয়ার বড় জলাধার বা ড্যাম আছে প্রায় ১৮টি। এগুলি হল- (১) মুরগুমা- বেগুনকোদরের সামনে ঝালদা থানা (২) পুটিয়ারী- হুড়া থানা, লধুড়কার কাছে। (৩) মৌতোড়- রঘুনাথপুর থানা, চেলিয়ামার কাছে (৪) লহরিয়া – অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে, বাঘমুণ্ডি থানায় (৫) কুমারী- উর্মার কাছে (৬) শাখা- বলরামপুর থানায় (৭) কুলবেড়িয়া (৮) কেষ্টবাজার (৯) কফিভি - ঝালদা থানা (১০) ফুলঝরণা- আড়ষা থানা (১১) তারা- পুরুলিয়া মপস্বলে (১২) গোলামারা (১৩) যমুনা – পুরুলিয়া মফস্বল থানা (১৪) রামচন্দ্রপুর- সাঁতুড়ি থানা (১৫) সাহার জোড় (১৬) ফতেপুর (১৭) পিঠাজোড় (১৮) পাঞ্চেত- নিতুড়িয়া থানা

এসব ছাড়াও গ্রামে - গঞ্জে শহরে সর্বত্র রয়েছে অসংখ্য পাতকুয়া। বিভিন্ন গ্রামে আছে ইন্দারা। শহরের বুকেও আছে কিছু বিশাল বিশাল ইন্দারা। এগুলি শুধু স্থানীয় নয়, দূর দূরান্তের মানুষের পানীয় জল মেটানোর ক্ষমতা রাখে। এখন জন সংখ্যা বাড়ছে তাই মনে হচ্ছে এগুলি প্রয়োজনের তুলনায় কম এছাড়া যথাযোগ্য সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগই মৃতপ্রায়। তাছাড়াও কুয়োর জল আজকাল কেই পানীয় হিসেবে ব্যাবহার করে না। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ও আরও কিছু পুকুর খনন ও কূপ নির্মিত হলেও তা যথেষ্ট নয়।

শেষ করার আগে আর একটি কথা বলি, বর্তমানে একশো (১০০) দিনের কাজেও পুকুর খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে এবং এই সূত্র ধরে বেশ কয়েকটি পুকুর খোঁড়াও হয়েছে। তাই এ কথা বলা যেতেই পারে শ্রীযুক্ত সন্তোষ রাজগোড়িয়ার চোখে দেখা পুরুলিয়া কিন্তু যথেষ্ট সরস। আর আমাদের পরিসংখ্যানও কিছুটা তারই ঈঙ্গিত দিচ্ছে।

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading