আজও পুকুরগুলি খাঁটি

5 Apr 2016
0 mins read

সময়টা খারাপ ছিল|

ভোপা থাকলে নিশ্চিত বলতো সময়টা খারাপ| যে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও বিশ্বাস পুকুর তৈরী করত তা ক্রমে শুকিয়ে যেতে আরম্ভ করে|

‘দূরত্ব’ একটা ছোট্ট শব্দ, কিন্তু এই ছোট্ট শব্দটা প্রশাসন ও সমাজের মাঝে এসে পড়লে সমাজের কষ্ট যে কি পরিমাণ বেড়ে যায় তার হিসাব করা যায় না| আর এই দূরত্ব যদি এক পুকুরের বদলে হয় সাত সমুদ্রের, তখন আর ব্যাখা করার বাকি কী থাকে?

ইংরাজ আসে সাত সমুদ্র পার করে| সঙ্গে নিয়ে আসে নিজের সমাজের সংস্কৃতি ও অনুভূতি| ইংল্যান্ডে ছিলো প্রভু দাসের সম্পর্ক| সমাজের হিত কিসে তা ওখানকার প্রশাসনই সিদ্ধান্ত নিত| এখানে ছিলো জাতির সমাজ| রাজা অবশ্যই ছিলেন কিন্তু রাজা-প্রজার সম্বন্ধ ছিলো ইংরাজের অনুভব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন| এখানকার মানুষ নিজের হিত নিজে স্থির করতেন ও তা পূর্ণ করতেন নিজেদের শক্তিতে ও সহযোগিতায়| রাজা ছিলেন সহায়ক মাত্র|

আমাদের সমাজের কর্তব্যবোধের বিশাল সাগরের একটি বিন্দু হলো জলের ব্যবস্থা ও তার চিন্তা| সাগর ও বিন্দু একে অপরের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়ে ছিলো| বিন্দু যদি সাগর থেকে আলাদা হয়ে যায় তাহলে না থাকে সাগর, না বাঁচে বিন্দু| সাত সমুদ্র পেরিয়ে আসা ইংরাজ সরকারের না ছিলো কর্তব্যবোধের সাগর না তার বিন্দু| তারা নিজেদের দেশের অনুভব ও প্রশিক্ষণ অবলম্বনে দলিল দস্তাবেজ খোঁজার চেষ্টা করে| কিন্তু সেরকম কোন রেকর্ড তো আমাদের রাজ্যে রাখা হতো না| তাই তারা ঠিক করলো এখানে যা করার তাদেরই করতে হবে| এখানে তো কিছুই নেই|

দেশের অনেকাংশে ঘুরে ঘুরে ইংরেজরা অনেক খোঁজ-খবর জোগাড় করেছিলো, তবে তা তাদের কৌতুহলের বেশি কিছু ছিলো না| তাদের চোখে কর্তব্যের সাগর বা তার বিন্দুকে বোঝার দৃষ্টিটাই ছিলো না| তাই প্রচুর পরিমাণ খোঁজ-খবর জোগাড় করার পরও যে নীতি তৈরী হলো, তা সাগর ও বিন্দুকে তাদের অচ্ছেদ্য বন্ধন থেকে আলাদাই করলো|যদিও উত্কর্ষের সময় পার হয়ে গেছিল তবুও কিন্তু পতন শুরু হয়নি| ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ এমনকী বিংশ শতাব্দীর শুরুতেও ইংরাজরা যা কিছু দেখেছিলো, যা কিছু লিখেছিলো এবং যে গেজেটিয়ার তৈরী করেছিলো তাতে অনেক জায়গায় শুধু ছোটোই নয়, বড় বড় পুকুরেও কাজ চলার উল্লেখ পাওয়া যায়|

মধ্যপ্রদেশের দুর্গ ও রাজনাঁদ গ্রামের মতো জায়গায় ১৯০৭ সাল পর্যন্ত অনেক বড় বড় পুকুর তৈরী হচ্ছিল| বাঁদুলা নামের একটি পুকুরে বারো বছর কাজ চলার পর সেই সালেই সেটি শেষ হয়| এই পুকুর থেকে সেচের জন্য যে নহরগুলি কাটা হয় সেগুলির দৈর্ঘ্য ছিলো পাঁচশো তেরো মাইল|

সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই সমস্ত কাজ করতেন যে সমস্ত নায়কেরা, তাঁরা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক কোন পরিকল্পনা কেমন করেই বা মেনে নিতেন? তাঁরা ইংরেজদের চ্যালেঞ্জ জানান| এই দ্বন্দ্বের কারণেই সাঁসি, ভীলেদের মতো আত্মাভিমানী জাতিগুলি ইংরেজদের কাছে ঠগ্ অপরাধপ্রবণ প্রভৃতি অপবাদ পায়| আগের যা কিছু তা ইংরেজরা ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিলো| কেননা, এবার তো যা কিছু করার তারাই করবে| তবে এই যে আগের পরিকাঠমোগুলোকে নস্যাত করা বা উপেক্ষা করা, এটা তাদের কোন পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিলো না| এটা ছিলো তাদের দৃষ্টিভঙ্গীর সহজ পরিনাম| আর দুর্ভাগ্যক্রমে এই দৃষ্টিভঙ্গী আমাদের সমাজের সেই মানুষগুলির মধ্যেও সংক্রমিত হয়ে পড়লো যাঁরা মনপ্রাণ দিয়ে ইংরেজদের বিরোধিতা করেন, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ পর্যন্ত করেন|

বিগত দিনের অভ্যস্থ হাতগুলিকে বদলে দেওয়া হলো অকুশল কারিগরে| এমন বহু মানুষ যাঁরা গুণিজনখানা, অর্থাত গুণী বলে আখ্যা পেয়েছিলেন তাঁরা এখন অশিক্ষিত, অসভ্য, অ-প্রশিক্ষিত আখ্যা পেলেন| এই নতুন রাজ-ও তার প্রকাশে উজ্জ্বল নতুন সামাজিক সংস্থাগুলি নতুন আন্দোলন ও নিজেদের নায়কদের শিক্ষণে প্রশিক্ষণে ইংরাজদের থেকেও এগিয়ে গেল| স্বাধীনতার পরের সরকার ও সামাজিক সংস্থাগুলির আচরণ, বিশেষ করে আন্দোলনের এই লজ্জাজনক প্রবৃত্তি যথারীতি বহাল থাকে|

সেই গুণী সমাজের হাত থেকে কিভাবে জলের ব্যবস্থা কেড়ে নেওয়া হয় তার একটি নমুনা দেখা যায় ঐ সময়ের মহীশূর রাজ্যে|

১৮০০সালে মহীশূর রাজ দিওয়ান পূণৈয়া দেখতেন| তখন রাজ্য জুড়ে ঊনচল্লিশ হাজার পুকুর ছিলো| বলা হতো, সেখানকার কোন পাহাড়ে এক ফোঁটা বৃষ্টির অর্ধেক এদিকে ও অর্ধেক ওদিকে গড়িয়ে পড়লে দুই দিকেই সামলে রাখার পুকুর ছিলো| সমাজ তো ছিলোই, তাছাড়াও এই উন্নতমানের পুকুরগুলির দেখাশোনায় রাজাও খরচ করতেন লক্ষ লক্ষ টাকা|

রাজা গেলো, ইংরাজ এলো| সব থেকে আগে তারা বন্ধ করলো এই খরচা| কেননা তাদের মতে এই খরচাটা ছিলো বাজে খরচা| রাজত্বের দিক থেকে পুকুরের জন্য যে খরচ দেওয়া হতো, ১৮৩১সাল থেকে তা কেটে অর্ধেক করে দেওয়া হলো| রাজত্বের এই কৃপণতাকে সমাজ নিজের উদারতা দিয়ে পরবর্ত্তী বত্রিশ বছর ঢেকে রাখে| পুকুর সাধারণ মানুষেরই ছিলো তাই রাজ্য বা সরকার থেকে পাওয়া সাহায্য কমে যাওয়া বা কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও সমাজ পুকুরগুলি সামলে রাখে| অত দীর্ঘ বছরের স্মৃতি অত তাড়াতাড়ি অত সহজে হারিয়ে যাওয়ার নয়! কিন্তু বত্রিশ বছর পর অর্থাত ১৮৩১সালে সেখানে প্রথম পি.ডব্লু.ডি. আসে, তখন সমস্ত পুকুর মানুষের হাত থেকে এই সংস্থার হাতে সঁপে দেওয়া হয়|

প্রতিষ্ঠা তো প্রথমেই কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো| ধনসম্পদও কেড়ে নেওয়া হলো| এবার প্রভুত্বও গেলো| সম্মান, অধিকার ও সুবিধা হারিয়ে সমাজ দুর্বল হয়ে পড়তে লাগলো| এই অবস্থায় শুধু নিজেদের কর্তব্য করে যাবে এ আশাই বা তাদের কাছে কি করে করা যায়?

মহীশূরের ৩৯,০০০পুকুরের দুর্দশার কাহিনী খুবই লম্বা| পি.ডব্লু.ডি. দিয়ে যখন কাজ চলল না, তখনই প্রথম সেচ-দপ্তর তৈরী হলো| পুকুরগুলি এবার সেচ-দপ্তরকে দেওয়া হল| তাদের দিয়েও কিছু না হলে আবার পি.ডব্লু.ডি.কে| এদিকে এই পাল্টা-পাল্টির মাঝে পুকুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরত কমতে লাগলো, অথচ পুকুরের রাজস্ব বাড়তে লাগলো| ইংরাজ এই কাজের জন্য চাঁদা পর্যন্ত আদায় করা আরম্ভ করল, পরে যা পশু মাসুল পর্যন্ত পৌঁছেছিলো|এদিকে দিল্লী, পুকুরের দুর্দশার এক নতুন রাজধানী তৈরী হতে চলেছিলো| ইংরাজ আসার আগে পর্যন্ত এখানে পুকুরের সংখ্যা ছিলো তিনশো চল্লিশ| এগুলিকেও রাজ্যের লাভ ক্ষতির পাল্লায় মাপা হলো এবং যেগুলি থেকে রোজগার হবে না বলে মনে করা হলো সেগুলিকে ছুঁড়ে ফেলা হলো রাজ্যের বিবেচনার বাইরে|

সেই সময়ই দিল্লীতে পাইপ লাইন বসানো চলছিলো| ১৯০০সালের আশেপাশে, বিয়ের সময় গাওয়া ‘গারিয়ো’ গানে এর বিরুদ্ধে ক্ষীণ সুরেলা আওয়াজ শোনা যায়| বরযাত্রী পংক্তিতে বসলে মেয়েরা গেয়ে উঠতো ‘ফিরিঙ্গি নল বসাতে দিও না’ | কিন্তু নল বসানো হতে থাকে এবং কুয়ো, পুকুর, বাউড়ির বদলে জল আসতে লাগলো ইংরেজদের তৈরী ওয়াটার ওয়ার্কস থেকে|

প্রথমে বড়, পরে ছোট শহরগুলিতেও এই স্বপ্নকে আকার দেওয়া হতে থাকে| কিন্তু শুধু পাইপ বসিয়ে মুখে নল লাগিয়ে দিলেই তো জল পাওয়া যাবে না! এই কথা তক্ষুনি না হলেও স্বাধীনতার কিছু সময় পর থেকেই আস্তে আস্তে বোঝা যাচ্ছিলো| ১৯৭০ সালের পর তা পাল্টে যেতে লাগলো ভয়ার্ত দু:স্বপ্নে| ততদিনে অনেক পুকুরই অবহেলা, উপেক্ষার পলিতে ভরাট হয়ে গেছে| তার ওপর গড়ে উঠেছ নতুন পাড়া, স্টেডিয়াম অথবা বাজার|

জল কিন্তু নিজের রাস্তা ভোলে না| পুকুর বুজিয়ে যে নতুন পাড়া গড়ে উঠলো বর্ষার সময় তা জলে ভরে যায় আবার বর্ষা শেষ হয়ে শীত পড়তে না পড়তেই ঘন হতে থাকে জলসঙ্কটের মেঘ| যে শহরের এখনও কিছু পয়সা আছে, শক্তি আছে সে অন্যের জল কেড়ে নিয়ে নিজের পাইপগুলো কোনভাবে সচল রেখেছে| কিন্তু অন্যগুলির অবস্থা প্রতি বছর খারাপের দিকেই চলেছে| অনেক শহরের কালেক্টর ফেব্রুয়ারীর আশেপাশেই গ্রামের পুকুরগুলির জলে সেচের কাজ বন্ধ করে তা সুরক্ষিত রাখেন শহরের জন্য|

শহরের জল চাই কিন্তু জল প্রদানকারী পুকুর নয়| টিউবওয়েল থেকেই তা পাওয়া যেতে পারে| কিন্তু তার জন্য বিদ্যুত ডিজেলের সঙ্গে সঙ্গে সেই শহরের মাটির তলায় জলও তো থাকা চাই| চেন্নইয়ের মতো অনেক শহরের দু:খজনক পরিস্থিতি এই কথাই বলে যে ক্রমাগত নেমে যেতে থাকা জলস্তর শুধু তত্ত্ব বা পয়সার জোরে ঠেকানো যাবে না| কিছু শহর দূর নদী থেকে জল বয়ে আনার ভীষণই খরচ সাপেক্ষ ও অব্যবহারিক ব্যবস্থা করেছে| ফলে এই পৌরসভাগুলির ওপর কোটি টাকার ইলেকট্রিক বিল চেপে বসেছে|

ইন্দোরের এইরকম উদাহরণ আমাদের চোখ খুলে দিতে পারে| দূরে প্রবাহিত নর্মদার জল এখানে বয়ে আনা হয়| পরিকল্পনার প্রথম ধাপ পর্যাপ্ত না হলে দ্বিতীয় ধাপের জন্য দাবী ওঠে সমস্বরে এবং ১৯৯৩সালে তৃতীয় ধাপের জন্য আন্দোলনও শুরু হয়| এতে জনতা পার্টি, সাম্যবাদী দল ছাড়াও শহরের পালোয়ান শ্রী আনোখীলালও চৌত্রিশ দিন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সত্যাগ্রহ করেন| কিন্তু এই ইন্দোরেই কিছুদিন আগে বিলাওলির মতো পুকুর ছিলো| যাতে ফ্লাইং ক্লাবের বিমান ডুবে যাওয়ায় নৌ সেনা নামাতে হয়েছিলো| নৌ সেনাও বড় সহজে কাজটি করে উঠতে পারেনি| আজ বিলাওলি একটা প্রকাণ্ড শুকনো মাঠ| ফ্লাইং ক্লাবের বিমান এখান থেকে সহজেই ওড়ানো যাবে|

ইন্দোরের পড়শি শহর ‘দেওয়াস’-এর গল্প আরও বিচিত্র| গত ত্রিশ বছরে এখানে ছোট বড় সমস্ত পুকুর বুজিয়ে ফেলা হয়| এরপর সেই জায়গায় বড় বড় বাড়ি, কারখানা গড়ে উঠল| এবার জানা গেল শহরকে জল দেবার মতো কোন জলের উত্স আর সেখানে বেঁচে নেই| শহর খালি হওয়া পর্যন্ত খবর ছাপা হচ্ছিল| শহরের জল প্রয়োজন কিন্তু জল আনা হবে কোথা থেকে? কুয়ো, পুকুরের বদলে দেওয়াস স্টেশনে দিবা রাত্রি কাজ চলল দশ দিন| ২৫এপ্রিল ১৯৯০সালে ইন্দোর থেকে পঞ্চাশ ট্যাঙ্কার জল নিয়ে একটি ট্রেন দেওয়াস স্টেশনে এসে থামলো| মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঢোল-নাগড়া বাজিয়ে জলের গাড়ির অভ্যর্থনাও হলো| মন্ত্রীমশায় নর্মদার জল পান করে প্রকল্পের উদঘাটন করলেন| এর আগেও শঙ্কটের সময় গুজরাট, তামিলনাড়ুতে রেলে করে জল পৌঁছানো হয়েছে| কিন্তু দেওয়াসে এখন প্রতিদিন রেলে জল আসে, সেই জল পাম্প করে ট্যাঙ্কে তোলা হয়, তারপর শহরে দেওয়া হয়|

রেলের ভাড়া প্রতিদিন চল্লিশ হাজার টাকা! বিদ্যুতের সাহায্যে এর পর জল তোলার খরচা আলাদা, আর ইন্দোর থেকে যে জল পাওয়া যায় তার দাম ধরলে দুধের দাম ও জলের দামে কোন তফাত থাকবে না| কেন্দ্র থেকে রেল ভাড়া আপাতত মকুব করে দেওয়া হচ্ছে| দিল্লীর জন্য সুদুর গঙ্গা থেকে জল তুলে আনা কেন্দ্র এখনও মধ্যপ্রদেশের প্রতি উদারতা বর্ষণ করে চলেছে, কিন্তু নতুন উদারনৈতিক অর্থনীতি রেল ও বিদ্যুতের বিল মেটাতে বলে বসলে দেওয়াসের নরকে পরিণত হতে কত সময় লাগেব?

জলের ব্যাপারে নিপাট বোকামির উদাহরণ বড় কম নেই| মধ্যপ্রদেশের সাগর শহরকেই যদি উদাহরণ হিসাবে নেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে প্রায় ছশো বছর আগে কোন লাথা বাঞ্জারার তৈরী করা সাগর নামের এক বিশাল পুকুরের পাড়ে গড়ে ওঠা এই শহরের নামই হয়ে যায় ‘সাগর’ | আজ এখানে নব্য সমাজের চার চারটে বড় বড় প্রতিষ্ঠিত সংস্থা রয়েছে – পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সেনাবাহিনীর মহরা রেজিমেন্টের প্রধান কেন্দ্র, পৌরসভা, স্যার হরি সিং গৌর-এর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়| এক বাঞ্জারা এখানে আসে আর বিশাল সাগর তৈরী করে চলে যায়| কিন্তু আর্থিকভাবে সম্পন্ন নব্য সমাজের এই চার চারটি প্রতিষ্ঠান সেটির রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত করতে পারছে না| সাগর পুকুরের ওপর অনেক গবেষণা পত্র লেখা হয়ে গেছে| তাদের ডিগ্রী দেওয়া হয়ে গেছে| কিন্তু লেখাপড়া না জানা এক লাখা বাঞ্জারার হাতের তৈরী সাগরকে লেখাপড়া জানা অগ্রসর সমাজ বাঁচাতে পর্যন্ত পারছে না|

উপেক্ষার এই সময়েও কিছু পুকুর আজও দাঁড়িয়ে আছে| সারা দেশে প্রায় আট থেকে দশ লাখ পুকুর বর্ষার জলে ভরে ওঠে ও সুপাত্রের সঙ্গে কুপাত্রকেও জল দিয়ে চলেছে| টিকে থাকার পেছনে পুকুরগুলির মজবুত গঠন অবশ্যই একটি কারণ, কিন্তু একমাত্র কারণ নয়| তাহলে তো শক্ত পাথরের তৈরী দুর্গ কোনদিনই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতো না|সমাজ আজ অনেক দিক থেকেই ভেঙ্গে পড়েছে কিন্তু তবু আজও সমাজের মনে পুকুরের স্মৃতি বেঁচে আছে| স্মৃতির এই দৃঢ়তা পাথরের থেকেও দৃঢ়|

ছত্রিশগড়ের গ্রামগুলিতে এখনও ছের-ছেরার গান গাওয়া হয় এবং তার থেকে পাওয়া আনাজে পুকুরগুলির সংস্কার করা হয়| আজও বুন্দেলখণ্ডে কাজলির গানে আট অঙ্গ ডুবতে পারার কামনা করা হয়| হরিয়ানার নারনোল-এ জাত নামানোর পর মা-বাবা পুকুরের মাটি কেটে পাড়ে দেয়| না জানি কত শহর কত গ্রাম এই পুকুরের জোরেই টিকে আছে| অনেক পৌরসভাই আজও এই পুকুরের কারণেই পালিত হচ্ছে | সেচ দপ্তরও পুকুরগুলির দমেই সেচের জল দিতে পারে| বিজা-র ডাহার মতো গ্রামগুলিতে আজও সাগরের সেই নায়ক নতুন পুকুর খুঁড়ছে এবং প্রথম বর্ষায় তাতে রাতভর পাহারা দিচ্ছে| ওদিকে আজও প্রতিদিন সূর্য ঘড়সীসরে সকাল-সন্ধ্যা মনভর সোনা ঢেলে যায়|

কিছু কানে আজও সেই স্বর গুণ গুণ করে|
‘ভালো ভালো কাজ করে যেয়ো|’

Tags: Aaj Bhi Khare Hain Talab in Bengali, Anupam Mishraa in Bengali, Aaj Bhi Khare Hain Talab, Anupam Mishra, Talab in Bundelkhand, Talab in Rajasthan, Tanks in Bunddelkhand, Tanks in Rajasthan

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading