আর্সেনিক আমেরিকায়


খাদ্য থেকে আমেরিকানদের শরীরে রোজ 8-14 মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক প্রবেশ করে l উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশশতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রচুর আর্সেনিক ঘটিত কীটনাশক ও আগাছানাশক জমিতে ছড়ানোয় আমেরিকার বহু অঞ্চলের মাটি আজও আর্সেনিক, লেড ও কপার বিষে ভারাক্রান্ত l

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র


বর্তমানে আমেরিকায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ 50µg/L এর বেশি মাত্রার আর্সেনিক জলপান করে থাকে l পশ্চিমের প্রদেশগুলিতেই আর্সেনিক আধিক্য দেখা দেখা যায় l মেইন, মিনেসোটা, মিচিগান, দক্ষিণ ডাকোটা, ওকলাহোমা, উইসকনসিনের জলে আর্সেনিক অপেক্ষাকৃত বেশি ( >10 µg/L )l ইয়েলোস্টোন অঞ্চলের জলের আর্সেনিকের উত্স ভূতাপীয় l কোথাও আয়রন অকসাইডে আবদ্ধ আর্সেনিক বিজারণ প্রক্রিয়ায় বিমুক্ত হয় l কোথাও বা সালফাইড আকরিক থেকে জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আর্সেনিক জলে আসে l শুষ্ক অঞ্চলে জলের বাষ্পীভবনের ফলে গাঢ়ীভবনের মাধ্যমে আর্সেনিকের মাত্রা বাড়েl উটা অঞ্চলের মিলার্ড কাউণ্টি অঞ্চলে জলে 14-166 µg/L আর্সেনিক পাওয়া গেছে l অতীত আগ্নেয়গিরিজাত পদার্থ সমূহই আর্সেনিকের উত্স l এখানকার ক্রিশ্চানদের এক বিশেষ সম্প্রদায় মর্মনদের (mormons) স্বাস্থ্য ও জন্মমৃত্যুর সুরক্ষিত নথিপত্র থেকে জানপদিক সমীক্ষায় মনুষ্যদেহে আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়া ভালভাবে জানা গেছে l যে অ্যানাকোণ্ডায় খনিজ উত্তোলন ও তাম্রধাতু নিষ্কাশনে যথেষ্ট পরিমাণে বিমুক্ত আর্সেনিক পরিবেশ বিষিত করত, 1980 সাল থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে l

উল্লেখযোগ্য আমেরিকান আর্সেনিক হটস্পটের মধ্যে আছে ট্যাকোমা, ওয়াশিংটন স্টেট ও অ্যানাকোণ্ডা, মণ্টানা l উভয়স্থানই পূর্বেকার তাম্রধাতু নিষ্কাশন নিসৃত আর্সেনিকে বিষিত l নেভাদার আর্সেনিকের উত্স পাইরাইট খনিজ ও হাইড্রোথার্মাল উত্স l সল্টলেকের উটার মিলার্ড কাউণ্টির পরিবেশের আর্সেনিকের সমীক্ষা সুপ্রতিষ্ঠিত l তাছাড়া অ্যারিজোনা ও ক্যালিফোর্নিয়াতেও কিছু আর্সেনিক সমস্যা আছে l টেকসাসের একটি পেস্টিসাইড কারখানা নির্গত আর্সেনিক বিষণে নিকটবর্তী কিছু পরিবারে বর্ধিত মৃতশিশু জন্ম লক্ষ্য করা গেছে l খাদ্য থেকে আমেরিকানদের শরীরে রোজ 8-14 মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক প্রবেশ করে l উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশশতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রচুর আর্সেনিক ঘটিত কীটনাশক ও আগাছানাশক জমিতে ছড়ানোয় আমেরিকার বহু অঞ্চলের মাটি আজও আর্সেনিক, লেড ও কপার বিষে ভারাক্রান্ত l

মোটকথা, পানীয়জলে আর্সেনিকের আধিক্য বেশিরভাগ জায়গাতেই নাই l কিছু কিছু স্থানে 50µg/L এর কিছু বেশি থাকলেও আর্সেনিক ঘটিত অসুখ-বিসুখ আমেরিকায় বেশি নেই l আমেরিকায় পরিবেশীয় আর্সেনিক গবেষণা প্রচুর l

মেকসিকো


ক্রনিক আর্সেনিক বিষণের ফলে উত্তর মেকসিকোর মধ্যভাগে ল্যাণ্ডনেরা অঞ্চলে আর্সেনিকের মহামারী l আর্সেনিক ঘটিত প্রায় সব রকম অসুখই এখানে দেখা যায় l গবেষণা ও সমীক্ষার কাজও হয়েছে প্রচুর l মেলানোসিস, কেরাটোসিস, ক্যানসার, কালোচরণ অসুখও (BFD) এখানে দেখা যায়, আন্ত্রিক সমস্যাদিও ব্যাপক l সাণ্টা আনার জলে 40 µg /L আর্সেনিক পাওয়া গেছে (1994) l দূ লক্ষাধিক মানুষ এর বেশি মাত্রার জল পান করে l আর্সেনিকের উত্স ভূতাপীয় ও ভূতত্ত্বীয় l

দক্ষিণ আমেরিকা
চিলি


আন্দিজ পর্বতমালার প্রস্রবনসমূহ থেকে উত্পন্ন নদীগুলি আগ্নেয়গিরিজাত শিলাস্তরের ওপর দিয়ে আসার জলে আর্সেনিক আধিক্য দেখা যায় l আগ্নেয়গিরির অবক্ষেপ (সেডিমেণ্ট), কিছু আকরিক ও মৃত্তিকা ও ক্ষয়ীভূত হয়েই জলে আর্সেনিক আসে l উত্তর চিলির বেশ কিছু নদী ও খাঁড়ির জল আর্সেনিক দূষিত l সেই জল পানীয় ও সেচে বরাবরই ব্যবহার হয় l বিষিত মাটিতে আর্সেনিকের মাত্রা 40 থেকে 448 মিগ্রা কেজি প্রতি l এখানকার বাঁধাকপি, মূলো, বিট, সিম, আলু, পেঁয়াজে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি l

এখানকার জলীয় আর্সেনিকের বৃহত অংশই হল As(V) l মানুষজনের, বিশেষ করে শিশুদের দেহে, আর্সেনিক ঘটিত রোগলক্ষণ প্রকট l গর্ভপাত, শিশুমৃত্যুরও আধিক্য ছিল l 1958 সাল থেকে নদী জল শোধন করে সরবরাহ থেকেই আর্সেনিকের সংক্রমণ শুরু l ঐ নদীজলে আর্সেনিকের মাত্রা ছিল 800µg /L 1970 এর পর থেকে আর্সেনিক দূরীকরণ করে জল সরবরাহের ব্যবস্থা চালু করার পর থেকে অবস্থার উন্নতি হয় l প্রথমে জলে আর্সেনিকের মাত্রা কমে, 800 থেকে 100 হয়, পরে তা নেমে আসে 40µg /L এ l তখন অনুরূপ ভৌগোলিক ও জনবৈশিষ্ট্যর সাণ্টিয়াগো ( রাজধানী ) ও ভ্যালপারাইসো শহরের মতোনই অ্যাণ্টোফ্যাগাস্টাতেও শিশুমৃত্যু একই রকম ভাবে কমে এল l

ক্রনিক আর্সেনিক বিষণের ফলে উত্তর মেকসিকোর মধ্যভাগে ল্যাণ্ডনেরা অঞ্চলে আর্সেনিকের মহামারী l আর্সেনিক ঘটিত প্রায় সব রকম অসুখই এখানে দেখা যায় l গবেষণা ও সমীক্ষার কাজও হয়েছে প্রচুর l মেলানোসিস, কেরাটোসিস, ক্যানসার, কালোচরণ অসুখও (BFD ) এখানে দেখা যায়, আন্ত্রিক সমস্যাদিও ব্যাপক l সাণ্টা আনার জলে 40 µg /L আর্সেনিক পাওয়া গেছে (1994 ) l দূ লক্ষাধিক মানুষ এর বেশি মাত্রার জল পান করে l

অ্যাণ্টোফ্যাগাস্টা ও ক্যালামা শহরের চার লক্ষ অধিবাসীকে আর্সেনিকমুক্ত শোধিত জলসরবরাহ করা হচ্ছে রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আর্সেনিক নিরাকরণ করে l ফেরিক বা অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রকসাইডের সঙ্গে আবিষ্ট, তঞ্চিত আর্সেনিক ফিল্টার করে জল আর্সেনিক মুক্ত করা অ্যাণ্টোফ্যাগাস্টার এক সাফল্যের ইতিহাস l আণ্টোফ্যাগাস্টার জলে আর্সেনিক থাকত 0.40-0.45 মিগ্রা লিটার প্রতি, পরে নেমে আসে 40µg /L এর নীচে l আর্সেনিক দূরীকরণ কারখানার আর্সেনিকযুক্ত ফেরিক হাইড্রকসাইড বর্জ্য মরুভূমিতে পুকুর তৈরি করে সংরক্ষিত হচ্ছে l

আর্জেণ্টিনা


দক্ষিণ-পূর্ব আর্জেণ্টিনা পম্পা প্রদেশের করডোবা অঞ্চলের জল শতসহস্র যাবত্ই যে আর্সেনিকযুক্ত তা আধুনিক বিজ্ঞান উদঘাটিত করেছে l তাতে আর্সেনিক ঘটিত অসুখ-বিসুখ হতই l তখন জনসংখ্যা কম ছিল, রোগানির্ণয়ও সম্ভব ছিল না l এখানকার জলের আর্সেনিক মাত্রা 100 থেকে 316 µg /L, সর্ব্বোচ্চ 3810 µg /L (1989 ) l জলে আর্সেনিকের সঙ্গে সেলেনিয়ামের আধিক্য l এখানকার আর্সেনিকের উত্স লোয়েস মৃত্তিকা, অপচূর্ণ ভূতত্ত্বীয় পদার্থ সমৃদ্ধ ( পাইরোক্লাসটিক ) l লোয়েস মৃত্তিকায় আর্সেনিকের বর্ধিত মাত্রা 5.5-73 মিগ্রা কেজি প্রতি l যে সব জায়গায় জলে আর্সেনিক বেশি, যেসব স্থানে নানারকম ক্যানসার, স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত, জন্মপরে শিশুমৃত্যু ইত্যাদির আধিক্য l বৈজ্ঞানিক ভাবে এটা প্রতিষ্ঠিত যে এতকাল আর্সেনিকে উন্মুক্ত থেকেও এই অঞ্চলের মানুষজনের ভিতর আর্সেনিকে অনাক্রম্যতা জন্মায়নি l উত্তর পশ্চিম আর্জেণ্টিনার সল্টা ও ভুজ প্রদেশের উপরিতলের জল, অগভীর নলকূপ ও উষ্ণপ্রস্রবন আর্সেনিকের উত্স। উষ্ণপ্রস্রবনগুলির জলের মাত্রা 50 থেকে 9900µg /L পানীয় জলে 470 থেকে 770 µg /L টার্সিয়ারি-কোয়াটার্নারি যুগের আগ্নেয়গিরি অবক্ষেপে যুক্ত হয় আগ্নেয়গিরি – উত্তর গেজার ও উষ্ণপ্রস্রবনের আর্সেনিক।

सम्पर्क


মণীন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
প্রাক্তন অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ডীন ফ্যাকল্টি অফ সায়েন্স, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়


Source: Extract from the book titled “Banglay Arsenic: Prokiti O Pratikar” written by Prof. Manindra Narayan Majumder

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading