ভিসন-যৌথতার মূল চালিকা শক্তি


যেটা এনারা ভালভাবে বুজেছেন, যে যৌথভাবে না চললে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে। আর যদি প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাদের অস্বাস্থ্যকর আর্সেনিক বিষত জল পান করা ছাড়া উপায় থাকবে না। অর্থাত চাপটা এসেছে প্রকৃতি থেকে। তাই তারা যূথবদ্ধ।

পশ্চিমবঙ্গে 19 টি জেলা আজ আর্সেনিক আক্রান্ত। আক্রান্ত 4,27 কোটি মানুষজন। পানীয় জলের জন্য ভূগর্ভস্ত জলকলের সংখ্যা প্রায় 40 লক্ষের কাছাকাছি। সর্বাপেক্ষা আর্সেনিক আক্রান্ত জেলাগুলি হল - মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা। যেহেতু বেশ কিছু মানুষকে হু নির্দেশিত গ্রহণযোগ্য সর্ব্বোচ্চ আর্সেনিক দূষক মাত্রার অর্থাত 10 পি.পি.বি.-র ওপরে আর্সেনিক যুক্ত বিষিত জল পান করতে হয় এবং সেই কারণে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা 2,6 কোটি। আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল দেওয়ার জন্য স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্চ ইঞ্জিনীয়ারিং, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রকল্প হাতে নেন। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় লালগোলা ব্লকের অর্ন্তগত তিনটি গ্রাম - মালতিপুর, বরশিমূল এবং শিরকাপড়া ও বাহাদুরপুর ব্লকের অর্ন্তগত গুজাস্থিরামপুর গ্রাম, এসব গ্রামগুলির জলে আর্সেনিকের পরিমান ভীষণ ভাবে বেশী। গ্রামগুলিতে এই প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব হয়েছে গ্রামের মানুষদের সহযোগিতায়, যৌথ ভাবনায় কারণ মানুষজন এটা বুঝেছেন যে প্রকল্পটি ঠিক মতো চললেই তাঁরা আর্সেনিক মুক্ত জল পেতে পারেন আর তাতে তাঁদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে যে সব স্বাস্থ্য সমস্যা হবে - পরিপাক ও আন্ত্রিক গোলযোগ, গায়ে আর্সেনিকের দরুণ ছোপ পড়া, স্নায়বিক গোলমাল, চামড়ার ঘা এমনকি ত্বকের ক্যানসার পর্যন্ত। সে কারণে তাঁরা সকলে মিলে যৌথভাবে এই প্রকল্পগুলিকে যাতে সুষ্টুভাবে কার্যকরী অবস্থায় চলে, তারজন্য নিজেরাই কমিটি গঠন করেছেন, রক্ষনা বেক্ষনের জন্য টাকাপয়সা সংগ্রহ করে ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট খুলে দরকার অনুযায়ী নিজেরা খরচা করেছেন। দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রকল্পগুলি ঠিকঠাক চলছে। এক একটি প্রকল্প কমপক্ষে 500 জন মানুষকে আর্সেনিকমুক্ত পানীয়জল সরবরাহ করে থাকে।

যৌথভাবে চলার যদিও এটা প্রকৃষ্ট উদাহরন, কিন্তু এখানে একটা কথা থাকছে। যেটা এনারা ভালভাবে বুঝেছেন, যে যৌথভাবে না চললে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে। আর যদি প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাদের অস্বাস্থ্যকর আর্সেনিক বিষত জল পান করা ছাড়া উপায় থাকবে না। অর্থাত চাপটা এসেছে প্রকৃতি থেকে। তাই তারা যূথবদ্ধ।

দ্বিতীয়তঃ যৌথ উদ্যোগ অর্থাত কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ ইদানিং কালে বেসরকারী অংশীদারীত্বে ( পি.পি.পি. মডেলে ) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোন ভালো কাজ পি.পি.পি. মডেলে সম্ভব নয়। কারণ ব্যবসায়ীরা এসেছেন ব্যবসা করতে। এটা আসলে একধরনের বেসরকারিকরন, এটা বুঝতে হবে। এটা ঘুরপথে বিদেশী লগ্নীর একটা পদ্ধতি দেশি লগ্নীর হাত ধরে। স্বভাবতই যৌথ উদ্যোগ নিয়ে ভাবনা না করাই যুক্তিযুক্ত।

তৃতীয়তঃ যৌথভাবে চলার আরেকটি প্রকৃষ্ট উদাহরন যৌথ পরিবার। এক সময় এটাই ছিলো সমাজের দস্তুর। যৌথভাবে না চললে যে ভালোভাবে থাকা যাবে না, সম্যকভাবে সেটা সকলেই জানতেন। যে বা যারা আর্থিকভাবে কমজোরি, তিনি বা তাঁরা যৌথ পরিবারে নিজেদের আটকে রাখতেন, তার সাথে যুক্ত থাকতো পারিবারিক ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে ভোগবাদী ও মূল্যাবোধ হীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌথ পরিবারগুলি ভাঙ্গতে শুরু হয়ে গেছে। তারা যুথবদ্ধ পরিবার থেকে বেরিয়ে গিয়ে সমাজে টিকে থাকতে চাইছে। অখানে যৌথতার ভাবনার চাপটা এসেছে আর্থ সামাজিক অবস্থা থেকে। কিন্তু ভিসন - দর্শন যদি স্বচ্ছ হয়, আন্তরিক হয়, সমাজবদ্ধ জীবের ন্যায় আচরণ করা যায়, তখন যৌথভাবে সামাজিক কাজ করার প্রেরণা নিয়ে যে কোন স্বপ্ন সম্ভব হয়।

এই প্রেক্ষাপটে আমরা বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের কথা উল্লেখ করতে পারি যা যৌথভাবে সামাজিক কাজ করার একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত যা, গড়ে উঠেছে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে, সেখানে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন তাঁরা একটা ভিসন নিয়ে এসেছেন, তাঁরা কাজ করেছেন যৌথভাবে, যৌথ ভাবনায়। এমত বেশ কিছু সংস্থাও যেমন শ্রমিক - কৃষক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল তৈরী হয়েছে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই।

আসুন, আমরা শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়ার দর্শন নিয়ে, সকলকে নিয়ে পথ চলার আয়োজন করি, একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করি যৌথ দর্শনের।

सम्पर्क


ড. অরুণকান্তি বিশ্বাস
প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা ও ডেপুটি ডাইরেক্টর, ন্যাশানাল এনভায়রনমেণ্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী), কলকাতা


Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading