দূষণে জেরবার কলকাতা


রাতে বায়ুদূষণের পরিমান স্বাভাবিক সহনমাত্রার চেয়ে বেশি থাকছে। দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী পূজোর দিনগুলোতে ভাসমান ধূলিকণার পরিমান গড়ে 140 - 163 মাইক্রোগ্রাম প্রতি ধনমিটারে, জানুয়ারীতে রাত 8 টার পর থেকে পরের দিন বিকেল পর্যন্ত ভাসমান ধূলিকণার পরিমান গড়ে 297 - 479 মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ গড়ে 321 - 510 মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে, সহন মাত্রার চেয়ে বেশি।

কেউ বলছেন কলকাতা এক দিন তিলোত্তমা হবে, কেউ বলছেন লন্ডন হবে, হয়তো বা হয়ে গিয়েছে শহর কলকাতা তার কাব্যিক বিশ্লেষণে, কিন্তু বাস্তবে কি দেখছি, বুঝছি কলকাতা বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, বর্জ্জ্য পদার্থ উদ্ভুত দূষণে জেরবার হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। দূষণ থেকে সুরাহা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন কমিটি, বিভিন্ন প্রোগ্রাম নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা, পরিস্থিতি ক্রমশই ঘোরালো হয়ে উঠছে, কলকাতা কলকাতাতেই আছে, আইন না মানাটা একটা বিধি হয়ে উঠেছ। এর সাথে যুক্ত থাকছে জন বিস্ফোরণ। মানুষজন বেলাগাম জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, সামাজিক দায়িত্ববোধ অনীহা, অসহনীয় পরিবেশের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

সময়ের সাথে কলকাতার ঘনত্ব ক্রম বর্ধমান জনগণনার সমীক্ষায় কলকাতার জনসংখ্যা ছিল 4,5 মিলিয়ন (2011) এবং বর্তমানে 4,8 মিলিয়ন বৃহত্তর কলকাতার জনসংখ্যা ছিল 14,2 মিলিয়ন (2011) এবং বর্তমানে 15,05 মিলিয়ন জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে গত 80 ফোল্ড হিসেবে বাড়ছে।

আলোচনা করা যাক বায়ু দূষণ নিয়ে। আমরা খাদ্য না পেলে কিছুদিন বাঁচতে পারি, জল না পেলে কয়েকদিন বাঁচতে পারি, আবার বিশুদ্ধ বায়ু না পেলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আমাদের মৃত্যু ঘটবে তাই পৃথিবীর বায়ু, মাটি, জল সঠিকভাবে সংরক্ষিত না হলে ভবিষ্যতে প্রাণের পরিবেশে ভীষণ সংকট নেমে আসবে কারণ সেই বাতাসে অক্সিজেন কমছে বায়ু দূষণের কারণে। আগে ছিল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত কাঠকয়লা, গোবর, কাঠ ইত্যাদি থেকে উদ্ভুত ধোঁয়া, জনস্বাস্থের উপর যার ক্ষতিকারক প্রভাব অনিবার্য কলকাতার দূষণের কারণগুলির অন্যতম কারণগুলি হচ্ছে কলকাতা ও কলকাতার আশ-পাশের ছোট, বড় শিল্প কারখানার চিমনি থেকে কালো ধোঁয়ার নির্গমন, ডিজেল চালিত এবং 15 বছরের পুরোনো গাড়ীর ধোঁয়া, ছাই নানা ধরনের রাসায়নিক সঠিক পদ্ধতিতে শোধন না করে পরিবেশে ছাড়ার ফলে মারাত্মক দূষণ করে যাচ্ছে, নির্মান কাজের কারনে সৃষ্ট দূষণ, বস্তি, হোটেল ও দোকানে কয়লা ও কাঠ, যেখানে সেখানে টায়ার জাতীয় জঞ্জাল পোড়ানোর ফলে দূষণের সৃষ্টি হয়ে থাকে কলকাতায় পুরোনো গাড়ী এবং অন্য উত্স থেকে ভাসমান ধূলিকণা এবং নাইট্রোজেন সালফার যৌগ বাতাসে ছড়ায়। এ ছাড়াও কলকাতায় বড় বড় জলাশয়গুলি ভরাট হয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের মদতে নগরায়নের নামে, এর ফলে ভাসমান ধুলিকনা যা জলের ওপরে পড়ে থিতিয়ে যেতে পারতো তা হচ্ছে না।

বায়ুদূষণের ফলে অ্যাজমা, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি প্রবলেম, হার্টের সমস্যা, সর্দিকাশি, হাঁপানি, ফুসফুসের রোগ, ব্রঙ্কাইটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন মানুষ, শিশু, দুর্বল, অশক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রসুতি ও নবজাতকরাই সবচেয়ে বেশি। মূলত শীতকালেই এর প্রভাব বেশি হয়ে থাকে। বাড়ে শ্বাসজনিত এলার্জি। ভিক্টোরিয়ার মতো হেরিটেজ বিল্ডিংগুলো বিবর্ণ হয়ে উঠছে দূষণের প্রকোপে।

Ministry of Environment and Forests Notification অনুযায়ী Environmental (Protection), Seventh Amendment Rules, 2009 তে এক National Ambient Air Quality Standards তৈরী হয় যথা ভাসমান ধূলিকণার ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে 100 মাইক্রোগ্রাম ও 80 মাইক্রোগ্রাম 24 ঘণ্টার পরিমাপের প্রেক্ষিতে, এছাড়া সালফার ডাইঅক্সাইড, ওজোন, লেড, কার্বন মনোঅক্সাইড, অ্যমোনিয়া ইত্যাদির সহনমাত্রার পরিমানের উল্লেখ আছে।

বায়ু দূষণে আক্রান্ত কলকাতার চিত্রটা একটু দেখা যাক। দেখা যাচ্ছে রাতে বায়ু দূষণের পরিমান স্বাভাবিক সহন মাত্রার চেয়ে বেশি থাকছে। দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী পূজোর দিনগুলোতে ভাসমান ধূলিকণার পরিমান গড়ে 140 - 163 মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে, জানুয়ারীতে রাত 8 টার পর থেকে পরের দিন বিকেল পর্যন্ত ভাসমান ধূলিকণার পরিমান গড়ে 297 - 479 মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ গড়ে 321 - 510 মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে, সহনমাত্রার চেয়ে বেশি।

এ তো গেলো দূষণের একটা খন্ড চিত্র। এর থেকে মুক্তির উপায় উপায় আছে। চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়িত্ববোধ, চাই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ;

- দূষণের ছাড়পত্র নিয়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সঠিক কাগজপত্র না থাকলে গাড়ী বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

- শহরে মালবাহী ট্রাকের সংখ্যা কমাতে হবে।
- যত্রতত্র জঞ্জাল পোড়ানো যাবে না।
- নিয়মিতভাবে রাস্তায় ও কারখানার আশেপাশে সবুজায়ন করতে হবে।
- রাস্তা তৈরীর সময় প্রকাশ্যে পিচ পোড়ানো বন্ধ করা দরকার।
- বাড়ী তৈরীর সময় পরিবেশবিধি মানার ব্যবস্থা নিতে হবে।
- অটো গাড়ীর চলাচলে নিয়ন্ত্রনবিধি ও সি.এন.জি. এল.পি.জি. ব্যবহারে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
- প্রতিটি গাড়িকে নির্দিষ্ট পরীক্ষার পরই দূষণের ছাড়পত্র দিতে হবে। পুরোনো গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ের পর বাতিল করতে হবে।
- পুজোতে - অনুষ্ঠানে বাজী পোড়ানো বন্ধ করতে প্রশাসনকে ও রাজনৈতিক দলগুলিকে সঠিক দায়িত্ব নিতে হবে।

শেষ করার আগে একটা বিনীত আবেদন সকলের কাছে, আসুন আমরা দূষণ প্রতিরোধে সকলে মানবিক হই।

सम्पर्क


ড. অরুণকান্তি বিশ্বাস
প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা ও ডেপুটি ডাইরেক্টর, ন্যাশানাল এনভায়রনমেণ্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী), কলকাতা


Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading