জল ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা


আমাদের দেশে প্রতি আটজনে একজন পরিস্কার জল পায় না। 3, 3 লক্ষ লোক আমাদের দেশে প্রতি বছর জল সম্পর্কিত রোগে মারা যায়। ঠিকমতো হাত ধুয়ে জীবনধারণ করলে কমপক্ষে 45 শতাংশ ডায়েরিয়ার মতো রোগ কমে যায়

হাত ধোয়া ও জ্বর জ্বালা বিষয়ে আলোচনা করার আগে আমরা পানীয় জল ও জলবাহিত রোগ নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করে নেবো

পৃথিবীতে প্রথম প্রাণ এসেছিল জলে জল না হলে আমরা কী আজ বেঁচে থাকতাম ? শুধু আমরা কেন, পৃথিবীর কোনো প্রণীই জল ছাড়া বাঁচে না জলের প্রয়োজন দু’ এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না সকাল থেকে সন্ধ্যে, যে কোনো কাজেই আমাদের জলের দরকার সাধারণভাবে জলের পরিমাণ অফুরন্ত বলে মনে হলেও মানুষের ব্যবহার উপযোগী জলের পরিমাণ কিন্তু খুবই সীমিত তাই জলের যথাযথ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ ভীষণ ভীষণ জরুরি

আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল অথচ মজার বিষয় হল এই তিন ভাগ জলের অনেকটাই সমুদ্রের নোনা জল আর বাকি জলের অনেকটাই আছে বরফ হয়ে আর মাত্র এক ভাগেরও কম জল ব্যবহার করা যায়

সাধারন ভাবে বলা যায় পানীয় জলের উত্স দুই প্রকার :


ভূ-পৃষ্ঠের জল যেমন -
1. নদী
2. জলস্রোত
3. হ্রদ
4. পুকুর
আর ভূ-গর্ভস্থ জল যেমন -
1. ঝরণার জল
2. অগভীর কূপ
3. গভীর কূপ

এ ছাড়া আছে বৃষ্টির জল, যা আমরা বর্ষার সময় পুকুরে বা কোনো জলাধারে ধরে রেখে, সামান্য পরিস্রুতন করে, ক্লোরিনেশেনের মাধ্যমে জীবানু ধ্বংস করে পানীয় জল হিসাবেও ব্যবহার করতে পারি যদিও আমরা 80 শতাংশ সময় ভূগর্ভস্থ জলের ওপর নির্ভরশীল থাকি পানীয় জল বা অন্যান্য কাজের জন্য যে জলের প্রয়োজন পড়ে সেই ব্যাপারে

এবার আসা যাক কতটা জল, এবং কিভাবে আমরা ব্যবহার করতে পারি তার জন্য ভারত সরকার একটা নিয়ম করে রেখেছেন ও সরবরাহের পরিমানও নির্দ্দিষ্ট করে দিয়েছেন গ্রামীন অঞ্চলের জন্য প্রতিদিন প্রতিজনে -

পানীয় জল -৫ লিটার, রান্নার কাজে -5 লিটার, শৌচকাজে - 10 - 15 লিটার, স্নানের জন্য - 15 - 20 লিটার, বাসনপত্র ধোওয়া, কাপড় কাচা ইত্যাদির জন্য – 7 - 12 লিটার

পানীয় জল কেন পানীয় তা আমাদের একটু জানা দরকার, জানা দরকার পানীয় জল কেমন হওয়া উচিত :

- রোগবহনকারী জীব মুক্ত
- পরিষ্কার ( কর্দমাক্ত বা ঘোলাটে নয় )
- বদ-আস্বাদন / গন্ধমুক্ত
- লবনাক্ত নয়
- কম লৌহ যুক্ত, কম ক্ষার যুক্ত জল
- স্বাদু জল
- বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান যা জলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয় তা থেকে মুক্ত হতে হবে

অ-নিরাপদ পানীয় জল ব্যবহার, অশুচিতা এবং স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থার অভাব নিম্নলিখিত বিভিন্ন রোগের প্রধান কারণ -

ক) আমাশয়, উদরাময়, কলেরা, টাইফয়েড প্রভৃতি
খ) সংক্রামিত হেপাটাইটিস বা জন্ডিস এবং পলিওমাইলাইটিস
গ) ক্রিমি সংক্রামণ ও রোগ
ঘ) জলজ কীটপতঙ্গ দ্বারা সঞ্চারিত রোগ, যথা - ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু প্রভৃতি
ঙ) চর্ম ও চোখের রোগ, যথা - ট্রাকোমা টাইফাস প্রভৃতি

বিশুদ্ধ জলের জন্য যে মাত্রা বেঁধে দেওয়া আছে তা পূরণ করতে হবে কারণ বিশুদ্ধ জল একটা দেশের জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে মস্ত বড় সহায়িকা হতে পারে -

 

পানীয় জলের গুনগত মান

অত্যাবশ্যক বৈশিষ্ট্য / উপাদান

গ্রহণীয় সর্ব্বোচ্চ মাত্রা (একক - মিঃ গ্রাঃ প্রতি লিটারে )

বর্ন, অস্বচ্ছতা

বর্নহীন, স্বচ্ছ

স্বাদ

গন্ধমুক্ত

কর্দমাক্ত, (এন.টি.উ)

5

পি এইচ

6, 5 - 8, 5

মোট ক্ষরতা (ক্যালসিয়াম কার্বোনেট হিসেবে )

600

ক্লোরাইড লবন ( ক্লোরাইড হিসেবে )

1000

ফ্লুরাইড লবন ( ফ্লুরাইড হিসেবে )

1, 5

আর্সেনিক

0 , 05

পরিশোধিত ক্লোরিন

0, 2

মোট কলির্ফম ( টোটাল কাউণ্ট )

10 - 100 মিলি

 

এবার আসি, জলের দৈনন্দিন ব্যবহারের কথায়, কিছু খাওয়ার আগে ও পরে এবং শৌচ কাজে জলের ব্যবহার আছে জানতে হবে হাত ধোয়া এবং হাতের যত্নের প্রয়োজনীয়তা

কারণ -
- হাতে লেগে থাকা জীবানু বহু রোগের কারণ
- সাধারণ হাত ধোয়ায় হাত পরিষ্কার দেখালেও, তা প্রমান করে না যে হাত জীবানুমুক্ত হয়েছে
- কখন হাত ধোয়ার প্রয়োজন সেটাও আমরা সর্বদা বুঝি না
- হাত ধোয়ার নির্দিষ্ট বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি আমরা ঠিকমতো মেনে চলি না
- পরিস্কার জলে শৌচকার্য করা দরকার
- শৌচের পর হাত সাবান দিয়ে ধোওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে কতকগুলি জরুরী তথ্য আমাদের জেনে রাখা দরকার :
- আমাদের দেশে প্রতি আটজনে একজন পরিস্কার জল পায় না।
- 3, 3 লক্ষ লোক আমাদের দেশে প্রতি বছর জল সম্পর্কিত রোগে মারা যায়।
- ঠিকমতো হাত ধুয়ে জীবন ধারণ করলে কমপক্ষে 45 শতাংশ ডায়েরিয়ার মতো রোগ কমে যায়

পানীয় জল দূষিত হওয়ার কিছু কারণ :


- নোংরা জল জমা
- কাপড় কাচা, বাসন মাজা
- স্নান, হাত - মুখ ধোওয়া
- কাছাকাছি ছোট বাচ্চাদের ও গৃহপালিত পশুর বর্জ্য ত্যাগ
- কলতলার চাতাল ভেঙে বা ফেটে নোংরা জল চাতালের তলা দিয়ে চুঁইয়ে মাটির তলার জলস্তর দূষিত হওয়া
- পানীয় জলে হাত ডুবিয়ে জল তোলা
- জল রাখার পাত্রের মুখ না ঢেকে রাখা

যেসব কাজে আগে হাত ধোয়া দরকার :
- খাদ্য পরিবেশনের আগে
- খাওয়ার আগে
- হাত যখন চোখে দেখে অপরিস্কার বলে মনে হয়
- বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরে এসে
- নিজে ওষুধ খাওয়ার আগে বা অপরকে ওষুধ খাওয়াবার আগে
- কণ্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের আগে

যেসব কাজের পর হাত ধোয়া দরকার -
- শৌচকার্যের পর
- বাচ্চাদের পায়খানা পরিস্কারের পরে
- নাকের শিকনি, লালা, বমিতে হাত লাগার পর

সবশেষে দুটো কথা আলোচনা করে শেষ করবো :


- সবকিছু মুখস্থ করবে না, বেশি মুখস্থ করলে মনের শক্তি কমে যায়
আর - যেটা শিখছো সেটা কোনো বন্ধুকে বা ছোটো ভাইবোনকে তাড়াতাড়ি শেখাও

পরিবেশ, পরিচ্ছান্নতা নিয়ে প্রতিদিনকার কিছু ভাবনা, শুধু মনে রাখা নয়, কাজে লাগালে যেমন নিজে ভালো থাকা যায়, সেই সাথে সকলকেও ভালো রাখা যায় -

1. সঠিক স্থানে, সঠিক সময় আবর্জ্জনা ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিদিন পথ চলতে এদিক ওদিক থুতু ফেলবো না।
2. আর ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে যদি চাও বাঁচতে চারপাশের জমা জল প্রতিদিন হবে সরাতে।
3. পোষাক বা জামাকাপড় হতে হবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সুনাগরিকরূপে মোরা তবে হবো গন্য
4. পাটের ব্যাগে, চটের থলিতে আমরা জিনিষ বইবো প্লাষ্টিক ব্যবহার এক্কেবারেই ভুলবো
5. সঠিক সুন্দর নিকাশী ব্যবস্থা গড়তে প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের হবে ছাড়তে
6. শুধু বায়ু যদি বুক ভরে নিতে চান, চারধারে, চারপাশে চারাগাছ লাগান
7. সঠিক স্থানে, সঠিক সময় ত্যাগ কর মলমূত্র সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার এটাই হবে সুত্র
8. এসো আমরা পরস্পরের হাত ধরি সুস্থ সুন্দর পরিবেশ গড়ি

ডঃ অরুণকান্তি বিশ্বাস, প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা ও ডেপুটি ডাইরেক্টর, ন্যাশানাল এনভায়রনমেণ্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী)

রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী), কলকাতা

Source: “A Lecture in different Schools at Sundarban in West Bengal organized by Sundar Bon Unnayan Niketan on the subject Use of Water and to live in a hygienic condition.”

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading