জল দূষণ ও কলকাতা (১)


35 শতাংশ জল বিভিন্নভাবে নষ্ট হচ্ছে ধরে নিয়েও প্রতিদিন 253 মিলিয়ন গ্যালন জল সরবরাহ বজায় রেখেছে কলকাতা পুরসংস্থা। এছাড়া কলকাতা পুরসংস্থা 325টি বড়ো ও গভীর নলকূপ ( lkg 2 deep tubewell ) যাদের গভীরতা 350 থেকে 750 ফুটের মধ্যে ও 1200-র কম গভীরতা সম্পন্ন নলকূপের মাধ্যমে জল উত্তোলন করে গড়ে প্রতিদিন প্রায় 46.2 মিলিয়ন গ্যালন জল সরবরাহ করে থাকেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও 4384টি নলকূপের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন গড়ে 201.18 মিলিয়ন গ্যলন জল উত্তোলন করে থাকেন। ফলত মাত্র 40 বছরই (1985 - 1998 সালের মধ্যে) জলের তল প্রায় 25 থেকে 27 ফিট নীচে নেমে গেছে।

১) প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা ও ডেপুটি ডাইরেক্টর, ন্যাশানাল এনভায়রনমেণ্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী), কলকাতা

২) শ্রী সুজিত কুমার ভট্টাচার্য, প্রাক্তন চীফ ইঞ্জিনিয়ার, গঙ্গা অ্যকশন প্ল্যান ( কে. এম. ডি. এ )

জলকে আমরা যেমন জীবন হিসেবে দেখে থাকি, সেই জল যদি জল না হয় তখন মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে। জলের ব্যবহার কৃষিকাজে, কলকারখানায় উত্পাদনের কাজে, খাদ্যশস্য উত্পাদনের কাজে, যান চলাচলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তেমনি জল বিধ্বংসী সংহাররূপে কখনো বন্যা, কখনো সুনামি আয়লার রূপ ধারণ করে আমাদের সমাজ, ভৌগলিক, আর্থিক নানানভাবে জীবনের মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে।

তবুও বলা যায় জলই জীবন, সেই জলের পরিমাণ আমাদের অপরিমিত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ক্রমহ্রাসমান শুধু নয়, অপেয় হয়ে উঠেছে। যদিও পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ জল বাকিটুকু স্থল এবং এই দুই তৃতীয়াংশের মধ্যে শতকরা শূন্য তিনভাগ ( 0.3 শতাংশ ) জল পাওয়া যায় নদীতে, জলাশয়ে, পুকুরে এবং শতকরা একভাগ ( 1 শতাংশ ) জল মাটির নীচে। অর্থাত এটাই পৃথিবীর ব্যবহারযোগ্য জল, বাকিটা লবণাক্ত ও তুষার শৃঙ্গে ও বরফে আটকে থাকা জল।

ভূপৃষ্ঠের জলকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিশোধনের মাধ্যমে পানীয় জলে রূপান্তরিত করার নানানরকম পদ্ধতি বিদ্যমান, তার মধ্যে ধীরগামী পাতন পদ্ধতি ( SLOW SAND FILTRTION ) ও দ্রুতগামী পাতন ( RAPID SAND FILTRATION ) প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্য। সাথে থাকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ক্লোরিনেশন বা ব্লিচিং পাউডারের মাধ্যমে ক্লোরিনেশনের ব্যবহার। ভূগর্ভস্থ জলে এমন কোনো পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই, শুধুমাত্র ক্লোরিনেশনের কারণেই পেয় জলে পরিণত হয়। তবে ইদানিং কালে কিছু রাসায়নিক পদার্থ যেমন ফ্লুরাইড, আর্সেনিক, লোহা পাওয়া যাচ্ছে এবং তাদের উপস্থিতি মানুষের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে যা পরিশোধনের দরকার হয়ে পড়ছে।

এবার সরাসরি চলে আসি কলকাতার জল জীবনের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু কথা বলা, কিছু অনুচ্চারিত বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে যাচাই করায়। কলকাতার ভৌগলিক আয়তন 187.33 বর্গকিলোমিটার ( 183.33 sq km ) এবং 2010-র আদমসুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় 46 লক্ষ ( approximately 46 lakhs ) । কলকাতার বাইরে থেকে দৈনন্দিনক কাজ, পুণ্যার্থী, সাময়িকভাবে বসবাস করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল, প্রদেশ থেকে গড়ে প্রতিদিন 15 লক্ষ লোক ( Foating population of 15 lakhs ) কলকাতায় আসছেন। এছাড়া ছোটোখাটো কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুলকলেজ, হাসপাতাল ও নানান কাজে জল সরবরাহ করে থাকেন কলকাতা পুরসংস্থা তাঁর নিজের বাসিন্দাদের স্বার্থে। কলকাতা পুরসংস্থা প্রধানত ভূপৃষ্ঠ অর্থাত গঙ্গা, হুগলীর জলকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিশোধন করে পেয় জল সরবরাহ করে থাকে এবং কিছুটা ভূগর্ভস্থ জল ও ব্যবহার করা হয়। এই পরিশোধন প্রক্রিয়া হয়ে থাকে পলতায় ইন্দ্রিরা গান্ধী জল প্রকল্প ( প্রতিদিন 260 মিলিয়ন, গ্যালন ), গার্ডেনরীচ জল পরিশোধন কেন্দ্র ( প্রতিদিন 91 মিলিয়ন গ্যালন ), ওয়াটগঞ্জ ও জোড়াবাগান জল পরিশোধন কেন্দ্র ( প্রতিদিন 31 মিলিয়ন গ্যালন) এবং ভূগর্ভস্থ জল ( প্রতিদিন 25 মিলিয়ন গ্যালন ) । 35 শতাংশ জল বিভিন্নভাবে নষ্ট হচ্ছে ধরে নিয়েও প্রতিদিন 253 মিলিয়ন গ্যালন জল সরবরাহ বজায় রেখেছে কলকাতা পুরসংস্থা। এছাড়া কলকাতা পুরসংস্থা 325টি বড়ো ও গভীর নলকূপ ( lkg 2 deep tubewell ) যাদের গভীরতা 350 থেকে 750 ফুটের মধ্যে ও 1200-র কম গভীরতা সম্পন্ন নলকূপের মাধ্যমে জল উত্তোলন করে গড়ে প্রতিদিন প্রায় 46.2 মিলিয়ন গ্যালন জল সরবরাহ করে থাকেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও 4384টি নলকূপের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন গড়ে 201.18 মিলিয়ন গ্যলন জল উত্তোলন করে থাকেন। ফলত মাত্র 40 বছরই (1985 - 1998 সালের মধ্যে ) জলের তল প্রায় 25 থেকে 27 ফিট নীচে নেমে গেছে।

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading