জল সংকট রক্তচক্ষু হানছে

24 Mar 2017
0 mins read

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক যে সমস্ত প্রভাব রয়েছে সেই প্রভাবকে রুখতে হলে প্রথমেই শক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা উচিত। তা না হলে, একদিন ভারতের প্রতিটি শহরই তাপ বৃষ্টির কারণে ‘হিট আইল্যাণ্ড’ এফেক্টের শিকার হবে। যার ফলে পরিবেশজনিত দূষণে রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়তেই থাকবে। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ভেঙে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর যে প্রভাবগুলি রয়েছে তা প্রতিরোধ করার জন্য কার্বন ফুট প্রিণ্ট, এবং ইকোলজিক্যাল ফুট প্রিণ্ট পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করা উচিত। এর জন্য আলাদা জরুরি বিভাগ থাকা একান্তই কাম্য।আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় চার হাজার ( 4000) বিলিয়ন ঘন মিটার বৃষ্টিপাত হয়। তার মধ্যে তিন হাজার ( 3000) বিলিয়ন ঘনমিটার জল সব সময়ই প্রবহমান কালেই হারিয়ে যায়। আর মাত্র এক হাজার ঘন মিটার জল আমরা সম্পদ হিসাবে পেয়ে থাকি। কিন্তু, জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রতি বছর বৃষ্টিপাত কম বেশি হয়ে থাকে। তাই, এখন থেকেই জল সংরক্ষণ অর্থাত বৃষ্টির জলকে ধরে রাখা বা জল ভরা অভিযানকে সার্থক ভাবে রূপায়ণ করতে হবে। বিজ্ঞানীদের অনুমান বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য জলের অভাব 2050 সালের মধ্যে এক ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ভারত হল মূলত একটি কৃষি প্রধান দেশ। সুতরাং প্রতি বছর চাষের জন্য আমাদের প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। মহারাষ্ট্রে জলের একটা বড়ো অংশ ব্যবহার হয়ে থাকে আখ চাষের কাজে। সেখানের চিনি কলের মালিকরা জলের এক চেটিয়া অধিকার পায়। আর গরিব মানুষরা বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। অথচ, এক সময়ে এখানে প্রচুর পরিমাণে জোয়ার, ছোলা, মুগ, ডাল, সূর্যমুখী প্রভৃতি -র চাষ হত। তাতে জলের কম প্রয়োজন লাগত। কিন্তু অধিক মুনাফার লোভে শুখা অঞ্চলকে লোভী মানুষেরা খরা অঞ্চলে পরিণত করছে।

স্বাধীনতার পরেও জল নিয়ে ভারতে নোংরা রাজনীতি হয়ছে ও হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্য প্রতিনিয়তই জল বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এই সমস্যা এখন জাতীয় সমস্যা। জলের সমস্যা সমাধানে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী তেমন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি আজও। ফলে, পানীয় জল নিয়েও বহু জায়গায় কালো বাজারি হয়ে চলেছে। আমাদের এই রাজ্যে অর্থাত পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূমের মতো জেলাগুলিতে গরমের সময় প্রতি বছরই ভয়াবহ জলের সংকট দেখা দেয়। নদী শুকিয়ে যায়। গরিব মধ্যবিত্ত মানুষ নদী সন্নিধ্য অঞ্চলে বালি খুঁড়ে জল বের করে। ওই জল বিশুদ্ধ নয়। কিন্তু, বাধ্য হয়েই তাদের সেই জল পান করতে হয়। ভারতের খরা প্রবণ জেলায় যদি আপনি যান তাহলে ওই দৃশ্য চোখে পড়বেই। বর্ষার আগেই পুরুলিয়া, বাঁকুড়াসহ শুখা জেলার প্রতিটি অঞ্চলে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা উচিত। শুধু তাই নয়, ওইসব অঞ্চলের সমস্ত নদীর সংস্কার করাও জরুরি।

শহর ও গ্রামে বৃষ্টির জলের সংরক্ষণ একান্তভাবে প্রয়োজনীয়, এছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা সমুদ্রের জলকে লবণ মুক্ত করে মানুষের ব্যবহার যোগ্য করে জল সংকট দূর করা যেতে পারে। তবে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন জন মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। তাপ প্রবাহে শিশু, যুবক এবং বয়স্ক মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ব্যধির সৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে দোসর হয়োছে বিভিন্ন ধরনের জল বাহিত রোগ। জল বাহিত রোগের প্রকোপ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ু দূষণ ও গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির নির্গমন প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমাদের এখনো দেশ তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক যে সমস্ত প্রভাব রয়েছে সেই প্রভাবকে রুখতে হলে প্রথমেই শক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা উচিত। তা না হলে, একদিন ভারতের প্রতিটি শহরই তাপ বৃষ্টির কারণে ‘হিট আইল্যাণ্ড’ এফেক্টের শিকার হবে। যার ফলে পরিবেশ জনিত দূষণে রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়তেই থাকবে। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ভেঙে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর যে প্রভাবগুলি রয়েছে তা প্রতিরোধ করার জন্য কার্বন ফুট প্রিণ্ট, এবং ইকোলজিক্যাল ফুট প্রিণ্ট পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করা উচিত। এর জন্য আলাদা জরুরি বিভাগ থাকা একান্তই কাম্য। একই সঙ্গে সমগ্র বিশ্বজুড়ে একটা সুসংহত গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে তথ্যের আদান - প্রদান দ্বারা ঐক্যমত্য এবং সংহতি গড়ে তোলা উচিত বলে মনে হয়। এছাড়াও রয়েছে অ্যসিড বৃষ্টি, অ্যাসিড বৃষ্টির কারণে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এতে জলের বিভিন্ন উত্সগুলিও দূষিত হচ্ছে। এ ব্যাপারেও শুধু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে ছেড়ে দিলে হবে না, ব্যবস্থা নিতেই হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনে শুধু জল নয় - জল, বায়ু, মাটি এই তিনটি উপাদানকেই রক্ষা করতে হবে। বাস্তুতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে পরিবেশের ভূ- রাসায়নিক চক্রেরও বিপর্যয় ঘটে থাকে। তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার ব্যাপক পরিবর্তনে ফসল ও কৃষি সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। আর কৃষি সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হলে খাদ্য সংকট দেখা দেবে। পরিবেশের সহন ক্ষমতা যদি নষ্ট হয় তাহলে তার ফলে অনিবার্যভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুরু হবে। জল ও জন স্বাস্থ্য রক্ষার দায় সরকারের। তাই ফসল রক্ষার দায়বদ্ধতাও সরকারকেই নিতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনে বনাঞ্চলের বাস্তু তন্ত্রের ব্যাপক রকম ক্ষতি হচ্ছে। বন অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা পেলে মানব সভ্যতার অগ্রগতি সাফল্য পাবে। কিন্তু খুবই দুঃখের কথা শুধু আমাদের রাজ্য বা আমাদের দেশ নয়, সমগ্র বিশ্বজুড়েই নির্বিচারে অরণ্য নিধন চলছে।

এনভায়রনমেণ্টাল অডিটিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, আর সেটাই একান্তভাবে উচিত। এতে শুধু বিজ্ঞানের অগ্রগতি নয়, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানেওর বৃদ্ধি ঘটবে। কারণ, এনভায়রনমেণ্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেণ্ট দ্বারা যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে তা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারবে। তাছাড়া, ভারত ছাড়া এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলিতে একই সমস্যা আছে। নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুধুমাত্র ভূমি এবং জলবায়ুর উপরই প্রভাব ফেলে না, সমস্ত মানুষের আর্থ - সামাজিক অবস্থারও ব্যাপক ক্ষতি করে।

Source: Published at Gopalpur, Sarkarpool, South 24 Parganas, Pin -700143.

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading