জল (Water)

16 Feb 2017
0 mins read

আমরা অনেক উন্নত পরিকাঠামোর যুগে বাস করছি। নদীর জল দূষিত করা বন্ধ করে, পানীয় জল অপচয় না করে, দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রয়োজন মতো জল সরবরাহের ও বণ্টনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা দরকার। জলের বিশুদ্ধতার উপর মানুষের ও অন্যান্য জীবের আয়ু নির্ভর করে। গরিব মানুষের পানীয় জল কেড়ে নিয়ে বড়োলোকের খেলার মাঠ ভেজাবার মতো অবিবেচকের কাজ যেন আমরা না করি।

প্রচলিত একটি কথা আছে - জলই জীবন। জল না থাকলে সেখানে জীবন থাকতে পারে না। কিন্তু জল অতি সহজ লভ্য হওয়ায় আমরা এর গুরুত্ব ঠিক মতো উপলব্ধি করতে পারি না। তাই আমরা জল অপচয়ও যেমন করি, তেমনি জল নোংরাও করে থাকি। অথচ বিশুদ্ধ জলের একটাই উত্স, সেটা হল বৃষ্টি। হ্রদ, হিমবাহ, নদী, ঝর্ণা বা কুঁয়া – এ সব পরোক্ষ উত্স। বৃষ্টি না হলে সব শুকিয়ে যাবে। আমরাও বাঁচব না। বৃষ্টিপাত বা জলের যোগান নির্ভর করে এমন কতকগুলি পরস্পর নির্ভর কারণের উপর যেগুলো অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল। যার ফলে বৃষ্টির সম্পূর্ণ সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা বৃষ্টিকে বা জলকে নামতে বাধ্য করাবার ক্ষেত্রে যতটুকু কৃতকার্য হয়েছেন প্রয়োজনের তুলনায় তা যত্সামান্য।

নদী প্রবাহ থেকে আমরা যে জল পাই তার পুরোটাই (170 মিঃ হেঃ মিঃ) যদি সেচের কাছে ব্যবহার করা যেত তা হলে আবাদি জমির পুরোটাতেই সেচের ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু মাত্র 80 মিঃ হেঃ মিঃ জল আমরা ,সেচের কাজে লাগাই। বাকি সমস্ত জলটাই সাগরে গিয়ে পড়ে।

আমাদের প্রয়োজন মতো বা কাজে লাগাবার জন্য বা বৃষ্টির জল জলাধারে ধরে রাখাও বেশ কঠিন কাজ। শুধু কারিগরি প্রশ্ন নয়, নদীর জল ধরে রাখতে গেলে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রশ্নও এসে পড়ে। মোটামুটি স্বল্প উচ্চতা বিশিষ্ট বাঁধের বেলাতেও জলাধারের আয়তন (অর্থাত সঞ্চিত জলের পরিমাণ ) বড়ো হওয়া দরকার। অর্থাত প্রকাণ্ড, গভীর এবং অপেক্ষাকৃত সমতল উপত্যকা থাকা চাই। জলাধারের পাড় পাথর দিয়ে বাঁধানো ও শক্ত হওয়া চাই, যাতে জলের চাপ সহ্য করা সম্ভব হয়, জলের চাপে ভেঙ্গে না পড়ে এবং সেই সঙ্গে ফুটো হওয়ার কোনো ভয় না থাকে। যেখানে জলাধার তৈরি হবে সেখানে বেশি লোকের বাস থাকলে চলবে না, তাই বাস্তুচ্যুত মানুষের পূর্ণবাসন বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কৃষি ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতির ফলে ভূ-গর্ভস্থ জলের ব্যবহার প্রচুর প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেছে। বৃষ্টিই ভূগর্ভস্থ জলের প্রকৃত উত্স। জল নিম্নমুখী অনুস্রবণ হওয়াটা বেশির ভাগটাই মাটির চরিত্রের উপর নির্ভর করে। মোটা বেলে মাটিতে জল দ্রুত নিচে নেমে যায় মিহি এটেল মাটিতে অনুস্রবণ হয় ধীর গতিতে। মাটির নিচে প্রবেশ করলেই পুরো জলটা জল তলে গিয়ে পৌঁছাতে পারে না, পৌঁছায় সেই জলের একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। বাকিটা ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি স্তর থেকে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। বস্তুতঃ যে 290 মিঃ হেঃ মিঃ বৃষ্টির জল মাটিতে প্রবেশ করে তার 230 মিঃ হেঃ মিঃ ভূমি পৃষ্ঠের থেকে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। সুতরাং ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর সেচের কাজে এবং কোথাও কোথাও পান করার জন্য ব্যবহারের ফলে আশঙ্কা জনকভাবে কমে গেলেও ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর বাড়ানো প্রায় অসাধ্য কাজ। সুতরাং ভবিষ্যতে নিত্য প্রয়োজনীয় জল এবং সেচের কাজে দরকারি জল সরবরাহের জন্য অবশ্যই চিন্তা ভাবনা করা দরকার হয়ে পড়েছে। বছরে যতটা জল অনুস্রবণের ফলে মাটিতে প্রবেশ করছে, মাটি থেকে টেনে তোলা জলের পরিমাণ যদি তার চেয়ে কমে বেঁধে দেওয়া যায় তা হলে একটা সুরাহা হতে পারে।

শীতকালে হিমালয়ের উপরে বরফ আবৃত এলাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় 500000 বর্গ কিলোমিটার ( দৈর্ঘ্য 2500 কিমি আর প্রস্থে 200 কিমি )। মোটামুটি বলা যায়, ঐ বরফে জলের পরিমাণ থাকে 400 মিঃ হেঃ মিঃ এর কাছাকাছি। অর্থাত সারা দেশে গোটা বছরে যে পরিমান বৃষ্টিপাত হয় এই জলের পরিমান তার সমান। কৃত্রিম উপায়ে যদি এই জলটার ব্যাপক ব্যবহার সম্ভব হত তাতেও বেশি দিন চলত না।

আমরা এখন অনেক উন্নত পরিকাঠামোর যুগে বাস করছি। নদীর জল দূষিত করা বন্ধ করে, পানীয় জল অপচয় না করে, দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রয়োজন মতো জল সরবরাহের ও বণ্টনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা দরকার। জলের বিশুদ্ধতার উপর মানুষের ও অন্যান্য জীবের আয়ু নির্ভর করে। গরিব মানুষের পানীয় জল কেড়ে নিয়ে বড়োলোকের খেলার মাঠ ভেজাবার মতো অবিবেচকের কাজ যেন আমরা না করি।

জলের জন্ম কথা


কোটি কোটি বছর আগে জীব ছিল না। জল থেকে জীবের জন্ম। আবার জলের জন্ম খুঁজতে গেলে পৃথিবীর জন্ম জানতে হবে। বৈজ্ঞানিকরা অনুমান করেন - আজ থেকে চার, পাঁচ শত কোটি বছর আগে পৃথিবীর জন্ম জন্মের সময় পৃথিবী গরম ছিল। তখন পৃথিবীর সব কিছুই ছিল গ্যাসের অবস্থায় আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হতে হতে পৃথিবীর উপর দিকে কঠিন মাটির ঢাকনা তৈরি হল ও জল – তরল ইত্যাদি পদার্থের সৃষ্টি হল।

জল তৈরি হয় দুটো উপাদন দিয়ে – হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। পৃথিবী সৃষ্টি হবার পর পৃথিবীর আদিম অবস্থায় যখন পৃথিবী ছিল অতি ভীষণ গরম, তখনকার পৃথিবীর সে অতি ভয়ানক গরম অবস্থায় এই হাইড্রোজেন গ্যাস পৃথিবীর বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ছিল।

কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীর জন্মের পরে পৃথিবীতে অনেক রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় হতে থাকে। ঝড়, ঝঞ্ঝা, বিজলীর, ঢেউ, বিস্ফোরণ ইত্যাদি নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিপর্যয় ও ভীষণ ভীষণ সব উত্পাতে পৃথিবীকে একেবারে তছনছ করে দিচ্ছিলো।

সূর্যদেবও পৃথিবীর অনেক আগে থেকেই আকাশে ছিলেন। সূর্যদেবের কিরণে নানা রকমের সব আলোক-রশ্মি আছে। এ সব আলোক-রশ্মির ভেতরে অতি বেগুনি রশ্মি বলে এক রকমের রশ্মি আছে। পৃথিবীর সেই আদিম গরম অবস্থায় পৃথিবীর বাতাসে প্রচুর হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন গ্যাস ছিল। জল তৈরি হতে হলে শুধু হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন গ্যাস থাকলেই হবে না। সে গুলোকে মেলাতে হলে অন্য জিনিসের সাহায্য প্রয়োজন হবে। সে সাহায্য করল সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি আর বিজলীর ঢেউ। তখনকার বাতাসে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন গ্যাস প্রচুর থাকায় পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে জল সৃষ্টি হল।

জল তৈরি হতে হাইড্রোজেনের পরিমাণ লাগে অনেক বেশি। অর্থাত দুই ভাগ হাইড্রোজেন ও একভাগ অক্সিজেন। তাই প্রচুর জল তৈরি হওয়ার ফলে বাতাসের হাইড্রোজেন গ্যাস প্রায় সব ফুরিয়ে গেল এবং অতিরিক্ত অক্সিজেন গ্যাস রয়ে গেল বাতাসে। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ার ফলে কিন্তু পৃথিবীর মোট জলের পরিমাণ বাড়ে না বা কমেও না, চিরদিন সেটা একই রকম থাকে। কারণ দিনের বেলায় সাগর, হ্রদ, নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদির উপর সূর্যের আলো পড়ে। সেই সূর্যের আলোর তাপে সাগর হ্রদ, পুকুর ইত্যাদির জল কিছু পরিমাণে বাষ্প হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। তাই আমরা দেখি — গরমের দিনে সূর্যের ভীষণ উত্তাপে খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদির জল শুকিয়ে যায়। জল বাষ্প হয়ে আকাশে জুড়ে গিয়ে মেঘ হয়, বৃষ্টির জল হয়ে আবার সেই জলই পৃথিবীর নদী নালা পুকুর ইত্যাদি ভরে দেয়। এই জলীয় বাষ্পের কিছু অংশ বাতাসের সঙ্গে গিয়ে উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত ঠাণ্ডার সংস্পর্শে এসে সেখানে বরফে পরিণত হয়। আবার সেই বরফ গলে নদীনালা বেয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে।

Source: Published at Gopalpur, Sarkarpool, South 24 Parganas, Pin -700143.

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading