জননতন্ত্রের ওপর ও ক্যানসার সৃষ্টিতে আর্সেনিকের ভূমিকা


জননতন্ত্রে আর্সেনিকের অপক্রিয়া


দীর্ঘ শ্রমসাধ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, অন্তঃসত্ত্বা নারী কর্মীরা ফ্যাকটরির অন্দর মহলে আর্সেনিক উত্সারী ধাতু বিগলক কেন্দ্রের যত কাছে কাজ করেছেন তাদের গর্ভস্থ সন্তানেরা তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত, জন্মানো শিশুর কম ওজন প্রভৃতি তত বেশি যত বেশি স্মেলটারের কাছে অন্তঃসত্ত্বা নারী কর্মীরা কাজ করেছেন। একটু দূরে ফ্যাকটরির ল্যাবরেটরির ও অফিসে কর্মরত অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের গর্ভস্থ সন্তানেরা কিছু কম ক্ষতিগ্রস্ত। আর দূরে আর্সেনিক মুক্ত উমিয়াতে জন্মানো শিশুদের ওজন স্বাভাবিক।

বিগত প্রায় ছয় দশক ধরে জানা আছে আর্সেনিক, গর্ভফুলের পর্দা (placental - barrier) ভেদ করে গর্ভজাত ভ্রূণকে আক্রমণ করে ফলে শিশুতে পরিব্যক্তি ( mutation ), ভ্রুণ বিকৃতি ( teratogenesis ) ও ক্যানসার প্রচুর দেখা যায় আর্সেনিক আক্রান্ত অঞ্চলে। জৈব আর্সেনিকের চেয়ে অজৈব আর্সেনিকই এই কাজ বেশি করে থাকে। গর্ভাবস্থায় আর্সেনিক সংক্রমণ নির্ধারণ করে কী ক্ষতি এবং কতটা ক্ষতি পারে। ভ্রূণবিনষ্টি, জন্মের পরে বা শৈশবে শিশু মৃত্যু, মৃত শিশু প্রসব, কম ওজনের শিশু জন্ম, গর্ভপাত, বিকৃত শিশু জন্মের সঙ্গে আর্সেনিক বিষণ সাধারণ ভাবে প্রতিষ্ঠিত। জীব-জন্তুর ওপর পরীক্ষাতেও একই ফলাফল দেখা গেছে।

উত্তর সুইডেনের রনস্কার তাম্র ধাতু নিষ্কাশন ফ্যাকটরিতে অধিক আর্সেনিক সম্বলিত তাম্র খনিজ প্রক্রিয়াকরণ হয়। দীর্ঘ শ্রমসাধ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, অন্তঃসত্ত্বা নারী কর্মীরা ফ্যাকটরির অন্দর মহলে আর্সেনিক উত্সারী ধাতু বিগলক কেন্দ্রের যত কাছে কাজ করেছেন তাদের গর্ভস্থ সন্তানেরা তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত, জন্মানো শিশুর কম ওজন প্রভৃতি তত বেশি যত বেশি স্মেলটারের কাছে অন্তঃসত্ত্বা নারী কর্মীরা কাজ করেছেন। একটু দূরে ফ্যাকটরির ল্যাবরেটরির ও অফিসে কর্মরত অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের গর্ভস্থ সন্তানেরা কিছু কম ক্ষতিগ্রস্ত। আর দূরে আর্সেনিক মুক্ত উমিয়াতে জন্মানো শিশুদের ওজন স্বাভাবিক। পরিসংখ্যান ও তথ্যাবলি নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালের রেকর্ড থেকে। 1930 সাল থেকে জন্মানো কয়েক হাজার জন্ম তথ্য ও পরিবেশের বাতাসের আর্সেনিক মাত্রা পরিমাপ করে নর্ডস্ট্রম ও তাঁর সহকর্মীরা নিশ্চিন্ত ভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন ( 1970’s) যে, গর্ভপাত ও প্রজাত শিশুদের জন্ম ওজন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লোকেদের কর্মকেন্দ্র অনুযায়ী যেভাবে কমে যায় তার ক্রম এরকম:- ধাতু বিগলন কেন্দ্রের যত নিকটে গর্ভবতী স্ত্রী লোকেরা কাজ করেন, তাঁদের গর্ভপাত যেমন বেশি, জন্মানো শিশুর ওজনও বেশ কম। একটু দূরে ল্যাবরেটরি ও প্রশাসনিক ভবনে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের গর্ভপাত কিছু কম, জন্মানো শিশুর ওজনও কিছু বেশি। আর আর্সেনিক মুক্ত দূরবর্তী উমিয়ার শহরে ( কণ্ট্রোল ) গর্ভপাত ও জন্মানো শিশুর ওজন স্বাভাবিক।

সম্প্রতি (1989) দেখা গেছে যে পূর্ব ম্যাসাচুসেটসে যেসব মায়েরা অধিক আর্সেনিকের জলপান করত (1.4 – 1.9 mg/L ) তাদের স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত হত বেশি। ঐ অঞ্চলের নব জাতকদের হৃদপিন্ডের গোলমালও বেশি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেণ্টাল স্টাডিজের গবেষকদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে বর্ধিত গর্ভপাত, মৃত শিশু প্রসব, সময়ের আগে প্রসব, কম ওজনের শিশুর জন্ম ইত্যাদি ব্যাপারে পানীয় জলের আর্সেনিক ( 284 – 1474 µg/L ) প্রভাব ফেলে। আর্সেনিক অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের পরীক্ষার পাত্রীদের বয়স ছিল 18 – 40 বছর, কারও গর্ভসঞ্চারই প্রথমবার নয়, সকলেই নিম্ন আয়ভুক্ত, বিবাহিত ও গায়ে আর্সেনিকের ছোপ ছিল। এই সমীক্ষায় কণ্ট্রোল হিসাবে নেওয়া হয়েছিল আর্সেনিক মুক্ত মেদিনীপুরের একটি অঞ্চলের প্রসূতিদের। বিহারের ভোজপুর ও বকসারেও কিছু সমীক্ষায় অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে। তার এই সব সমীক্ষায় প্রসূতি সংখ্যা ও অন্যান্য তথ্যাদি যথেষ্ট না হওয়ায় সিদ্ধান্ত সমূহে অনিশ্চয়তার বিষয়টিও এড়ানো যাচ্ছে না (12.19)।

কুমিল্লা জেলার লাখম থানার এরুয়ানি গ্রামের সমীক্ষায় ( DCH, SOES) গর্ভপাত, মৃত শিশু জন্ম, কম ওজনের শিশু জন্ম, সময়ের আগেই প্রসব ইত্যাদি লক্ষ্য করা গেছে। উত্তর-পূর্ব তাইওয়ানে পানীয় জলের বর্ধিত মাত্রার আর্সেনিকের কারণে হ্রস্বিত ওজনের (প্রায় 30 gm কম) শিশু জন্ম, সময়ের আগে প্রসব, এসব ঘটনা দেখা গেছে। ভারতবর্ষের তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রসমূহের ধোঁয়া, ধূলোর আর্সেনিক নিকটস্থ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীলোকেদের গর্ভস্থ সন্তানদের ওপর কী ধরনের কুপ্রভাব ফেলছে, তা দেখা উচিত।

ক্যানসার সৃষ্টি


শতবর্ষ আগে থেকেই দেখা গেছে যারা আর্সেনিক ঘটিত ওষুধ ব্যবহার করতেন তাদের চামড়ার অনেক বেশি ক্যানসার হত ( basal cell, and squamous cell careinomas )। অনুরূপ সময় থেকে এটাও দেখা গেছে যে, আর্সেনিকের খনি ও শিল্পে যারা কাজ করত তাদের চামড়া ও ফুসফুসে বেশি ক্যানসার হত। সাম্প্রতিক কালে আর্সেনিক ঘটিত কীট নাশক নিয়ে মিশিগান ও বাল্টিমোরে যারা কাজ করত, তাদের মধ্যেও শ্বাস - প্রশ্বাস যন্ত্রে ক্যানসার-জনিত অধিক মৃত্যু দেখা গেছে। ওয়াশিংটনের ট্যাকোমা-র তাম্র ধাতু বিগলন কেন্দ্রেও একইরকম ক্যানসারে অধিক মৃত্যু দেখা গেছে। মণ্টানার অ্যানাকোন্ডার তাম্র বিগলন কেন্দ্রে 1938 থেকে 1963 সালের মৃত্যুহার পরীক্ষা করেও দেখা গেছে বর্ধিত শ্বাস - প্রশ্বাস যন্ত্রের ক্যানসার।

পানীয় জলে বর্ধিত আর্সেনিক ত্বকের ক্যানসার ও পরিমেয় ক্রোমোজোম পরির্তন দেখা গেছে। ওরেগনে 1.2 পিপিএম আর্সেনিক মাত্রার পানীয় জল 14 বছর খাওয়ার পর চামড়ায় ক্যানসার হয়েছে। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে চিলির অ্যাণ্টোফ্যাগাস্টাতে ও দক্ষিণ-পশ্চিম তাইওয়ানে। আর বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গে তো কথাই নেই। তাইওয়ানে সামান্য বর্ধিত মাত্রার (0.01 থেকে 1.82 পিপিএম) আর্টেজীয় কূপের জলপান থেকে মূত্রাশয়, কিডনি, চামড়া, ফুসফুস, লিভার ও কোলোনে বেড়ে ওঠা ক্যানসারে মৃত্যু দেখা গেছে। এই অনুসন্ধানের সমীক্ষাকাল ছিল 1968 থেকে 1982 সাল (5.11।)

सम्पर्क


মণীন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
প্রাক্তন অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ডীন ফ্যাকল্টি অফ সায়েন্স, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়


Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading