মানব দেহে আর্সেনিক


শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রতিক্রিয়া


অধিক আর্সেনিক বিষণে রক্তের লোহিত কণিকার ক্ষতি হয়; স্বল্প বিষণে রক্তাল্পতা হতে পারে। আর্সাইন গ্যাস রক্তের লোহিত কণিকার এনজাইম ও কিছু প্রোটিনের সালফহাইড্রিল (-SH) গ্রুপের সঙ্গে দৃঢ় রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কিছুদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকার পর হঠাতই রক্ত বিয়োজন ঘটায়, যা থেকে অ্যানিমিয়া, হিমাচুরিয়া, কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া জাতিয় রোগ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।

খনিজ উত্তোলন, ধাতু নিষ্কাশন, তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রজাত আর্সেনিক বাতাস ও ধূলিবাহিত হয়ে মানুষের শ্বাস - প্রশ্বাস যন্ত্রে প্রবেশ করে। আর্সেনিকঘটিত কৃষি রাসায়নিক উত্পাদন ও প্রয়োগ থেকেও বুকে আর্সেনিক প্রবেশ করে। এ সবে রাইনিটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস ও ট্রাকিও ব্রঙ্কাইটিস হয়, যার ফলে নাক বন্ধ হয়ে যায়, গলাব্যথা, গলা ভাঙা ও সর্দি - কাশি লেগেই থাকে। তার ফলে অন্যবিধ সংক্রমণও ( সেকেন্ডারি ইনফেক্সন ) হয় ও কষ্টকর নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হাঁপানিরও উদ্ভব হয়। অ-সুরক্ষিত খনি বা ফ্যাকটরি কর্মীদের নাসারন্ধ্রের পর্দায় ( সেপটাম ) ফুটো হয়ে যায়।

ত্বকে বিষক্রিয়া


ত্বকে উদ্ভূত নানারকম লক্ষণ থেকে আর্সেনিকের সুস্পষ্ট সংক্রমণ বোঝা যায়। এইসব লক্ষণ পরিস্ফুট হওয়ার আগেই কিছু এনজাইম বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে ত্বকে নানা রকম জীবাণু সংক্রমণে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা যেতে পারে। রক্তবাহী কৈশিক নালিকার ক্ষয়-ক্ষতির দরুন মুখের রং লালচে হতে পারে। দেহ ত্বকের নানাস্থানে, বিশেষ করে হাতের তালুতে, পায়ের চেটোতে, বুকে, পিঠে নানা রকম সাদাটে, কালো দাগ (স্পষ্ট), কালো গুটি প্রভৃতি দেখা যায়। বিভিন্ন রকমের দাগ বা ছোপ হল :

স্পটেড মেলানোসিস অর্থাত কালো ছিট ছিট দাগ।
ডিফিউজ মেলানোসিস অর্থাত ছড়ানো কালচে দাগ।
লিউকো মেলানোসিস অর্থাত ত্বকের স্বাভাবিক বর্ণ পরিবর্তন অর্থাত সাদাটে স্পট বা ছোপ।

রেইনড্রপ পিগমেন্টেশন অর্থাত শুকনো রাস্তায় বৃষ্টির ফোঁটার মতো। কেরাটোসিস :
শরীরের নানা জায়গায়, বিশেষ করে হাত ও পায়ের পাতার ওপর রুক্ষতা ও গুটি দানা দেখা যায়। হাতের চেটো ও পায়ের তালু শক্ত ও পুরু হয়ে যায়। পায়ের তলা ফেটেও যেতে পারে। পাঁচ থেকে দশ বছরের ক্রনিক আর্সেনিক বিষণে কেরাটোসিস দেখা দেয়। পশ্চিমবংলা ও বাংলাদেশে এইসব আজকাল অনেক দেখা যাচ্ছে। ওই অবস্থাতেই বাংলার গরিব চাষিরা মাঠে কাজ করতে যায়। ফলে কারো কারো অবস্থা আরোগ্যের বাইরে চলে যায়।

দেহে আর্সেনিক সংক্রমণ হলে সম্ভবত রং তৈরির কোষ উত্তেজিত হয়। অধিক মেলানিন উত্পাদনে চামড়ায় কালো কালো ছোপ পড়ে। পরে সেই কোষগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কালো মেলানিন উত্পাদন বন্ধ হয়ে যায়। এসবের ফলে সাদা, কালো ছিট দেখা যায়।

কখনও কখনও কিছু রোগীর পায়ের চেটো ফুলে যায়, যা আঙুলের চাপে টোল খায় না। একে টোলহীন শোথ বলে। কারও আবার চোখে দেখতে পাওয়া যায় কনজাংটিভাইটিসের মতো হয়ে চোখ লাল হয়ে যাওয়া অবস্থা।

রক্ত সংবহন তন্ত্রে আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়া


অধিক আর্সেনিক বিষণে রক্তের লোহিত কণিকার ক্ষতি হয়; স্বল্প বিষণে রক্তাল্পতা হতে পারে। আর্সাইন গ্যাস রক্তের লোহিত কণিকার এনজাইম ও কিছু প্রোটিনের সালফহাইড্রিল (-SH) গ্রুপের সঙ্গে দৃঢ় রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কিছুদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকার পর হঠাতই রক্ত বিয়োজন ঘটায়, যা থেকে অ্যানিমিয়া, হিমাচুরিয়া, কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া জাতিয় রোগ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।

লিভারে আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়া


পুনঃ পুনঃ অল্প মাত্রার আর্সেনিক বিষণে লিভারে আর্সেনিক জমতে থাকে, যার ফলে কয়েক মাস বা কয়েক বছরে লিভারে বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা যায় যেমন - লিভারের সিরোসিস, পোর্টাল হাইপারটেনসন, চর্বি বিয়োজন ও প্রাইমারি হেপাটিক নিওপ্লাসিয়া। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ইসোফ্যাগালভ্যারিস সমূহে রক্ত ক্ষরণ, উদরী, জন্ডিস, স্ফীত লিভারে দেখা যায়। অত্যধিক মদ্যপানের সঙ্গে ক্রনিক আর্সেনিক বিষণ মুক্ত হলে লিভার সিরোসিস বাড়ে। আর্সেনিক পরফাইরিন বিপাক বিঘ্নিত করে।

আর্সেনিকের প্রভাবে মূত্রাশয়ে গোলযোগ


বারবার সংক্রমণ ঘটলে মূত্র গ্রন্থি বা কিডনিতে আর্সেনিক জমতে থাকে। কিডনিতেই আর্সেনেট (V) বেশি বিষাক্ত আর্সেনাইটে (III) বিজারিত হয় ও মূত্র মাধ্যমে দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়। কিডনির ক্যাপিলারি, টিবিউল ও গ্লোমেরিউলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সবের ফলে হিমাচুরিয়া, প্রোটিন ইউরিয়া, অলিগুরিয়া প্রভৃতির পর কিডনি বিকল (failure) হতে পারে; উপশম হিসেবে অবশ্য ডায়ালিসিসে কিছু কাজ হতে পারে।

सम्पर्क


মণীন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
প্রাক্তন অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ডীন ফ্যাকল্টি অফ সায়েন্স, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়


Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading