মেঘের ফাঁকি


ঝর্ণার জল পানের অপূর্ব অনবদ্ধ বিবরণ দিয়ে উপন্যাসের শুরু। উইলিয়াম ফকনার 1949 সালে নোবেল পুরস্কারে পুস্কৃত হন। ঝর্ণার জল বড়োই স্বাস্থ্যকর, তবে বর্তমানে মানবকুল তাকে পর্যটনে যথেচ্ছ ব্যবহার ও অপব্যবহার করে দূষণ - এর মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ঝর্ণার জলে আজ মিনারেলস -এর সাথে সাথে রোগ জীবাণুর পরিমাণ সমানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

অর্পিতা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে অর্ককে বলছে - কিরে তোর অঙ্কটা হল -কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অর্পিতা আবার বলতে শুরু করেছে একটি বারও চেষ্টা করে দেখছিস না – চেষ্টা না করলে হবে কেমন করে ? গ্যাসটা বন্ধ করতে করতে আবার বলতে থাকে - তারপরে যখন অঙ্কটা করা হয়ে যাবে তখন তো বলতে থাকবি, এটাতো ‘জলবত্ তরলং’।আরে একবার চেষ্টা তো করে দেখ।ডানিং টেবিলে এখন অর্কর পড়ার সময় –এবার অর্পিতা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে গ্যাসটা বন্ধ করে।অর্ক মায়ের ফোনটা নিয়ে খেলায় ব্যস্ত। - রাখ - রাখ বলে অর্ককে ধমকায় অর্পিতা -অর্ক মায়ের ধমক খেয়ে গুটিশুটি মেরে অঙ্কে মন দেবার চেষ্টা করে - ছেলের মতি গতি লক্ষ্য করে মাথায় বিলি কেটে আদর করে অর্পিতা বলে - থাক আর তোকে অঙ্ক করতে হবে না। অর্পিতা গম্ভীর হবার চেষ্টা করে।

অর্ক লাল হওয়া মুখে মায়ের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে কবে এক বার বলেছিলাম - জলবত তরলং। তুমি সেই কথাটি বারে বারে আমাকে মনে করিয়ে দাও। তা - ভাল কথা শিখেছ আর অঙ্ক শিখবে না তা হয় নাকি -পৃথিবীতে জলের চেয়ে বেশি তরল আর কিছু যে নেই তা কি জান?

অর্ক চুপ থাকে - অঙ্কে মন দেয় - অর্পিতা বলে – তুমি কি জান এই পৃথিবীতে 71 ভাগ জল আর 29 ভাগ হল স্থল ?

চুপ করে থাকলেও মায়ের কথা শোনার সাথে সাথে অর্কর মন চলে যায় - সমতল, মরু, পাহাড় আর গিরি কন্দন, পাহাড়ে পায়ে চলা পথ, ঝরণার জল ভরসা, ঝরণার অপরূপ রূপে বাড়তি সূর্যের আলো রামধনু রঙ পরিয়ে দেয়। বন্য জন্তুরা কিন্তু বাড়তি রূপে বিশ্বাসী নয়, বন্য জন্তুরা দিনের আলোতে ভয় পায় – তথা কথিত শিক্ষিত মানবজাতি দিনের আলোতে তাদের ধ্বংসে মেতে উঠবে - তাই এই তথা কথিত শিক্ষিত মানবজাতির ভয়ে বন্য জন্তুরা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকে - যেমন লুকিয়ে থাকে সমাজ বিরোধী অপরাধ প্রবন বিভিন্ন চরিত্ররা। এই সুন্দরী ঝর্ণায় জল পান করা সমাজ বিরোধী অপরাধীর চরিত্র পেপ ও হোরেস রেনবোকে নিয়ে উইলিয়াম ফকনারের ধ্রুপদী উপন্যাস , ‘দ্যা সাউণ্ড অফ ফিউরি স্যাংচুয়ারি’ । উইলিয়াম ফকনারের জন্ম বিখ্যাত মিসিসিপি নদীর কাছে আমেরিকায়, রিপলির ছোটো শহর অকসফোর্ডে 1897 সালে। ঝর্ণার জল পানের অপূর্ব অনবদ্ধ বিবরণ দিয়ে উপন্যাসের শুরু। উইলিয়াম ফকনার 1949 সালে নোবেল পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। ঝর্ণার জল বড়োই স্বাস্থ্যকর, তবে বর্তমানে মানবকুল তাকে পর্যটনের জায়গাগুলোতে যথেচ্ছ ব্যবহার ও অপব্যবহার করে দূষণ-এর মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ঝর্ণার জলে আজ মিনারেলস -এর সাথে সাথে রোগ জীবাণুর পরিমাণ সমানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারতর্ষের অনেক জায়গায় এই জল সংরক্ষণ ও পরিস্রূত করে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয়। বড়ো হয়ে ‘দ্যা সাউণ্ড অফ ফিউরি স্যাংচুয়ারি’ উইলিয়াম ফকনার -এর এই উপন্যাসটা পড়বি - ঝর্ণার বর্ণনাটা মন কেড়ে নেয়, কয়েকটা লাইন মাত্র নয় - ছেলেকে বলে নিজেকে সজাগ করে অর্পিতা -

পৃথিবীর বিশাল জলরাশির মধ্যে যে জলে সবচেয়ে কম পরিমান পদার্থ দ্রবীভূত থাকে তাকে একটা ইউনিট ধরা হয়। পৃথিবীর মোট এই 71 ভাগ জলের মধ্যে 96,5 ভাগ জল হল সমুদ্রের নোনা জল এটাই হল ‘এর’ দিয়ে গুণ এর অঙ্কের মত অর্পিতা অর্কের ভারাক্রান্ত মনটা সামাল দেওয়ার জন্যে আবার বলে, আমি তোকে অঙ্ক করতে বলছি না। তবে জানিস তো জলের ঘনত্ব আছে। যেমন দুধে জল মেশালে তার ঘনত্ব কমে, সেই রকম জলে যখন একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার সবচেয়ে কম দ্রাবক দ্রবীভূত থাকে তখন তার ঘনত্ব হয় এক ইউনিট। যে পদ্ধতির প্রয়োগ করা হবে ইউনিট তার মতো লেখা হয় এই জন্য জলের সাথে তরলের তুলনা করে অন্যদের ভারসাম্য বিচার করে জলকে সবচেয়ে সহজ তরল বলে ধরে দেওয়া হয়েছে।

কলিং বেলের আওয়াজে মা ও ছেলে দু’ জনেই দরজার দিকে তাকায় - অখিলেশ সকালের হাঁটা অভ্যাসটা বেশ বাড়িয়ে দিয়েছে। একেবারে বাজার করে বাড়ি ফেরে। তারপরে অফিস বোরোয়। ভেতরে ঢুকে বলে -আমি আজ তাড়াতাড়ি বেরোব - ব্যাগটা রেখে সব্জিগুলো বের করে। সব্জি বের করতে করতে বলে ভাল সব্জি বাজারে আসছে না – 2016 টা খরার বছর, সেই মার্চের 19 তারিখে ফাইনালের দিন বৃষ্টি হয়েছিল - তারপরে আজ জুন মাসের কত দিন হয়ে গেল - জলের জন্য সব্জির হাহাকার, কবে বৃষ্টি হবে তার ঠিক নেই। জল আর একটু ভাল মাটি বাঁচার রসদ।

অর্পিতা বলে - অনেকদিন পরে যদি বৃষ্টি হয় সেটা তো এই দূষণপূর্ণ শহরে অ্যাসিড রেন হবে তাই না - বলে সে অখিলেশের দিকে তাকায় - হ্যাঁ বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন গ্যাস, ধূলো জলের সাথে মিশে যাবে - তবে এই জল যেন আবার সংগ্রহ করে রেখ না – দু’ এক দিন পর পর বৃষ্টি হলে এই সম্ভাবনা কমে যাবে।

এই বিশাল পৃথিবীতে সমুদ্রের জল যদি মানুষ অধিক মাত্রায় কাজে লাগাতে পারত তাহলে আর মানুষকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হত না। সমুদ্রের জলে লবণের মাত্রা সর্বাধিক তাই মাল ভর্তি জাহাজ যখন নদী থেকে সমুদ্রে নামে তার সমুদ্রের জলে ডুবে থাকার আয়তনটা কমে যায় - মনে হয় যেন জাহাজটা খানিকটা উঠে গেছে। এবার অখিলেশ বলে - যাই, আমার ঘামটা বেশ শুকিয়ে গেছে, স্নানটা সেরে ফেলি। এই বলে অখিলেশ বাথরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে।

অর্পিতা ছেলেকে বলে - মানুষের শরীরও বেশির ভাগটাই জলীয় -প্রায় সত্তর শতাংশ জল ধরে রাখ মানুষের শরীর, পরিশ্রম ও তাপমাত্রার তফাতে রোমকুপ দিয়ে তারা ঘাম হিসাবে বের হয়। আমরা জলে যখন স্নান করি তখনও তাপমাত্রার প্রভেদে রোম কুপের ভেতরে দিয়ে জল শরীরের ভিতরে প্রবেশ করা, আবার বেরিয়ে যাওয়া।

পৃথিবীতে জলের এই ধর্মকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগানো হয়েছে পানামা খাল খনন করে জলের সমতাকে কাজে লাগিয়ে জাহাজ চলা চলের সময় এবং দূরত্বকে অনেক কমানো হয়েছে।

Source: Published at Gopalpur, Sarkarpool, South 24 Parganas, Pin -700143.

Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading