নিরাপদ পানীয় জলের সন্ধানে ও সংরক্ষণে উদ্যোগী হই


2030 সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে 40 শতাংশ ঘাটতি দেখা দেবে। বিশ্বজুড়ে মিষ্টি জলের যা যোগান রয়েছে তার মোটামুটি 70 শতাংশই চলে যায় কৃষিক্ষেত্রে । 2050 সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে সেচের কাজে জলের ব্য়বহার প্রায় 6 শতাংশ বাড়বে বলে অনুমান করা যায়।

এদেশে বিশুদ্ধ পানীয় জল আজ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। নিরাপদ পানীয়জল, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অন্যতম শর্ত। এর সাথে যুক্ত আছে স্বাস্থ্যসন্মত অভ্যেস এবং উন্নত স্যানিটেশন। আলোচনার আগে আমাদের জলের চাহিদা ও বণ্টন সম্পর্কে কিছু ধ্যানধারণা করে নিতে চাই।

আমরা জানি পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। পৃথিবীতে মোট জলের শতকরা 97 ভাগ সমুদ্রের নোনা জল, এই জল মানুষসহ অন্যান্য স্থলজ জীবের সরাসরি কোনো কাজে আসে না । আর বাকি মাত্র শতকরা 3 ভাগ মিষ্টি জল, যার অধিকাংশটাই আবার উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে বরফ হিসাবে জমে আছে । সুতরাং মানুষের ব্যবহার উপযোগী জলের পরিমাণ খুবই কম ( শতকরা এক ভাগেরও কম, অঙ্কের হিসাবে যদি দেখা যায় তাহলে0,67 )ব্যবহার উপযোগী মিষ্টি জলের কিছুটা আছে মাটির তলায় ভূগর্ভস্থ জল হিসাবে। নলকূপ বসিয়ে অথবা খনন করে এই জল পাওয়া যেতে পারে । ব্যবহার্য জলের বাকি অংশ আছে মাটির উপরে নদী, হ্রদ, খাল, বিল ও পুকুরে ভূতল জল হিসাবে, বৃষ্টির জল এবং উঁচু পর্বতের চূড়ার বরফগলা জলে পুষ্ট নদী ও ভূগর্ভস্থ জল আমাদের ব্যবহার্য জলের চাহিদা পুরণের প্রধান উত্স। সূর্যের তাপে যে পরিমাণ জল বিভিন্ন ভূতল উত্স থেকে জলীয় বাষ্পরূপে বাতাসে মেশে বৃষ্টিপাতের ফলে প্রায় সেই পরিমাণ জলই আবার উত্সগুলিতে ফিরে আসে। তাই পৃথিবীর মোট জলের পরিমাণের কোনো হেরফের হয় না।

2030 সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে 40 শতাংশ ঘাটতি দেখা দেবে। বিশ্বজুড়ে মিষ্টি জলের যা যোগান রয়েছে তার মোটামুটি 70 শতাংশই চলে যায় কৃষিক্ষেত্রে । 2050 সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে সেচের কাজে জলের ব্যবহার প্রায় 6 শতাংশ বাড়বে বলে অনুমান করা যায়।

ভারতে প্রাপ্তিসাধ্য টাটকা জলের পরিমাণ -
- বাত্সরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ- 400 মিলিয়ন হেক্টর মিটার
- ভূপৃষ্ঠের জলের উত্স হিসেবে সঞ্চিত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ- 187 মিলিয়ণ হেক্টর মিটার
- ভূগর্ভস্ত জলের উত্স হিসেবে সঞ্চিত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ- 43 মিলিয়ণ হেক্টর মিটার

এই হিসেবে সময়ের সাথে, লোকসংখ্যার প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্য জলের পরিমাণ কিভাবে আমরা পেয়ে থাকি এবং ভবিষ্যতে পাবো তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা যাক।

1947 সালে বছরে প্রতিজনে 5600 কিউবিক মিটার
2001 সালে বছরে প্রতিজনে 1840 কিউবিক মিটার
2007 সালে বছরে প্রতিজনে 1760 কিউবিক মিটার
2025 সালে বছরে প্রতিজনে 1330 কিউবিক মিটার
2050 সালে বছরে প্রতিজনে 2040 কিউবিক মিটার

এটাও জানা দরকার যে, ভারতে 85 শতাংশ জল ব্যবহৃত হয় চাষবাসের জন্য, 10 শতাংশ কল কারখানার জন্য ও 5 শতাংশ গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমীক্ষায় জানা গেছে যে, বর্তমানে নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন উত্স থেকে দীর্ঘস্থায়ী ভিত্তিতে মিষ্টি জলের যে যোগান রয়েছে, 2030 সালের মধ্যে তার তুলনায় চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাড়াবে প্রায় 40 শতাংশ। ভারতে ইতিমধ্যেই মাথাপিছু জলের জোগানের ক্ষেত্রে বেশ টানাটানি দেখা দিয়েছে এবং এভাবে চললে অচিরেই দেশে জলসংকট তৈরী হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তীব্র জলসংকট মানেই একদিকে জলবাহিত অসুখ - বিসুখের বাড়বাড়ন্ত, অন্যদিকে কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রের উত্পাদনশীলতা হ্রাস, পানীয় জলের জন্য হাহাকার ইত্যাদি । বর্তমানে এ দেশের জলের গুনমান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে পরিস্থিতি বেশ শোচনীয় হয়ে পড়েছে। নিরাপদ পানীয় জলের জোগানের সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে। নিরাপদ পানীয় অর্থাত পেয় জলের কিছু শর্ত আছে ।

যেমন জলকে হতে হবেঃ


- রোগবহনকারী জীবমুক্ত
- পরিস্কার ( কর্দমাক্ত বা ঘোলাটে নয় )
- লবনাক্ত নয়
- বদ-আস্বাদন-মুক্ত
- বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান যা জলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয় তা থেকে মুক্ত হতে হবে
- কম লৌহ যুক্ত, কম ক্ষার যুক্ত জল
- স্বাদু জল।

আসুন আমরা সকলে মিলে জলের প্রতিটি বিন্দু বাঁচিয়ে অমূল্য এই সম্পদ সংরক্ষণে উদ্যোগী হই।

1) বর্তিকা, শারদোত্সব সংখ্যা 2011
2)পরিবেশবিদ্যা- মজুমদার, মজুমদার
3) শ্রমজীবী স্বাস্থ্য, আগষ্ট 2014
4) যোজনা, জুলাই 2016

सम्पर्क


ড. অরুণকান্তি বিশ্বাস
প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা ও ডেপুটি ডাইরেক্টর, ন্যাশানাল এনভায়রনমেণ্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী), কলকাতা


Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading