পানীয় জল ও দূষণ


পানীয় জল স্বচ্ছ, গন্ধহীন ও বর্ণহীন হওয়াও একান্ত জরুরি। অ-নিরাপদ বা দূষিত জল পান করলে বিভিন্ন রোগ যথা ডায়েরিয়া, ডিসেণ্ট্রি, আন্ত্রিক, টাইফয়েড, জণ্ডিস, কৃমিরোগ প্রভৃতির সৃষ্টি হতে পারে। এই ধরণের রোগ গ্রামাঞ্চলে প্রায়শই দেখা যায়। শহরাঞ্চলেও বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। ভারতবর্ষে এখনও প্রতি বছরে প্রায় 15 লক্ষ শিশু (5 বছরের কমবয়সী) ডায়েরিয়াতে মারা যায়।

গুণাগুণ অনুয়ায়ী পানীয় জল জীবাণুমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। পানীয় জলে কোন রাসায়নিক পদার্থ বা লবণ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে থাকা উচিত নয়। পানীয় জল স্বচ্ছ, গন্ধহীন ও বর্ণহীন হওয়াও একান্ত জরুরি। অ-নিরাপদ বা দূষিত জল পান করলে বিভিন্ন রোগ যথা ডায়েরিয়া, ডিসেণ্ট্রি, আন্ত্রিক, টাইফয়েড, জণ্ডিস, কৃমিরোগ প্রভৃতির সৃষ্টি হতে পারে। এই ধরণের রোগ গ্রামাঞ্চলে প্রায়শই দেখা যায়। শহরাঞ্চলেও বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। ভারতবর্ষে এখনও প্রতি বছরে প্রায় 15 লক্ষ শিশু (৫ বছরের কমবয়সী) ডায়েরিয়াতে মারা যায়। গ্রামাঞ্চলের জল এবং জলবাহিত রোগে আক্রান্ত বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে দিন মজুরি থেকে বঞ্চিত হন ফলে পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হন। কিন্তু গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার মনোন্নয়ন যদি সরকারের লক্ষ্য হয় তবে গ্রামাঞ্চলে নিরাপদ জল সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যবিধান ব্যবস্থায় উন্নতি করা একান্ত জরুরি। এই উন্নয়নের ফলে জল এবং জলবাহিত রোগের হ্রাস ঘটবে, মানুষের অসুস্থতা যথেষ্ট কমে আসবে এবং ফলস্বরূপ পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে।

পানীয় জলের উত্স মূলত ভূগর্ভস্থ এবং ভূপৃষ্ঠস্থ জল। বৃষ্টির জলকে সরাসরি সংগ্রহ করে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করা যায়। গুণগত মান অণুযায়ী ভূগর্ভস্থ জল (কুয়ো ছাড়া) সাধারণত জীবাণুমুক্ত। কিন্তু কুয়োর জল জীবাণু দ্বারা দূষিত। ভূগর্ভস্থ জলে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রেই দ্রবীভূত লোহার আধিক্য থাকে। খরতা ভূগর্ভস্থ জলে বেশী। প্রাকৃতিক কারণে ভূগর্ভস্থ জলে রাসায়নিক দূষণ থাকার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে ভূপৃষ্ঠস্থ জল সাধারণত জীবাণুদ্বারা দূষিত। তবে এই জলে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ কম থাকে। এই জলে খরতা কম থাকে এবং দ্রবীভূত লবণের আধিক্য থাকে না। ভূপৃষ্ঠস্থ জলে বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্যজল মিশ্রিত হওয়ার ফলে রাসায়নিক দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভূগর্ভস্থ জল বেশীরভাগ অঞ্চলে কোন প্রকার পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি পান করা যায়। কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পানীয় রূপে ব্যবহার করার আগে পরিশোধনের প্রয়োজন হয়।

ভারতবর্ষে ভূগর্ভস্থ জলে প্রাকৃতিক কারণে গুণগত মানের পরিবর্তনের ফলে জল পানীয়রূপে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এবং গার্হস্থ কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লোরাইডের আধিক্যের (প্রতি লিটারে 1.5 মি. গ্রামের বেশী) ফলে এবং সেই জল পান করার ফলে দাঁতের রোগ, হাড়ের ক্ষয়রোগ এবং অন্যান্য শারীরিক রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে(Dental fluorosis, skeletal & non-skeletal fluorosis)। ভারতবর্ষের 19টি রাজ্যের প্রায় 216টি জেলাতে ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লোরাইডের আধিক্য পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়েছে। পশ্চিমবাংলায় ভূগর্ভস্থ জলে মাত্রাতিরিক্ত ফ্লোরাইড পাওয়া যায় 1996 সালে বীরভূমের নলহাটি ব্লকে। বর্তমানে পশ্চিমবাংলায় বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া প্রভৃতি জেলার 43টি ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লোরাইডের আধিক্য দেখা গেছে। ভূগর্ভস্থ জলের আরেকটি ভয়াবহ সমস্যা আর্সেনিক দূষণ। পানীয় জলে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা প্রতি লিটার জল 0.05 মিলিগ্রাম। পশ্চিমবাংলা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্রিশগড়, আসাম প্রভৃতি রাজ্যে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক দূষণ জলপরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়েছে। পশ্চিমবাংলার আর্সেনিক দূষণ সমস্যা সর্বাধিক। পশ্চিমবাংলার মোট 79টি ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক দূষণ চিহ্নিত হয়েছে। বহুদিন ধরে আর্সেনিক দূষিত জল পান করার ফলে চামড়া, পরিপাকযন্ত্র, যকৃত, প্রসাব যন্ত্র, স্নায়ু, ফুসফুস প্রভৃতি আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগে ক্যানসার এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।

ভূগর্ভস্থ জলে অনেক সময় দ্রবীভূত লোহার আধিক্য (প্রতি লিটার জলে 1 মিলিগ্রামের বেশী) দেখা যায়। যদিও জলে দ্রবীভূত লোহা মানুষের শরীরে সরাসরি কোন ক্ষতি করেনা। কিন্তু জলবাহিত নলে লোহার শক্ত আস্তরণ পড়ে এবং গার্হস্থ কাজে ও শিল্পের ক্ষেত্রে এই জল সমস্যার সৃষ্টি করে।

ভূপৃষ্ঠস্থ জল সারা বছর পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া গেলে গার্হস্থ জলের উত্স হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বড় বড় শহরে মূলত নদীর জল পরিশোধিত করে সরবরাহ করা হয়। ছোট জনপদে বা গ্রামাঞ্চলে পুকুর বা দীঘির জল পরিশোধন করে সরবরাহ করা যায়। জল পরিশোধনের প্রধান উদ্দেশ্য অপ্রয়োজনীয় ভাসমান এবং দ্রবীভূত কঠিন পদার্থগুলির অপসারণ। জলের ভাসমান কঠিন পদার্থগুলির অপসারণ প্রক্রিয়া সহজ। কিন্তু জলে দ্রবীভূত কঠিন পদার্থগুলির অপসারণ প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে শক্ত এবং বেশী খরচ সাপেক্ষ। সাধারণত ভূপৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন ব্যবস্থায় ভাসমান কঠিন পদার্থগুলিকেই অপসারণ করা হয়। তাই যে ভূপৃষ্ঠস্থ জল সরবরাহের আগে পরিশোধন করা হয়, সেই জলে দ্রবীভূত লবণ এবং রাসায়নিক যৌগ পদার্থ মাত্রাতিরিক্ত অবস্থায় না থাকা বাঞ্ছনীয়। জলে কঠিন পদার্থ সাধারণত তিনটি পরিমাপে থাকতে পারে, যথা 1 মিলি মাইক্রোনের কম (আয়ন বা অণু), 1 মিলি মাইক্রোনের বেশী কিন্তু ১ মাইক্রোনের কম (কলয়ডাল) এবং 1 মাইক্রোনের বেশী (ভাসমান পদার্থ) জল পরিশোধন কেন্দ্র মূলত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধরণের কঠিন পদার্থ অপসারিত হয়। দ্বিতীয় ধরণের কঠিন পদার্থ (কলয়ডাল) সহজে অপসারণ করা যায় না, কারণ এই কঠিন পদার্থগুলি সহজে থিতিয়ে পড়ে না। আসলে কলয়ডাল মাপের পদার্থগুলি সহজে মিলে বড় মাপের হয়না। এই কলয়ডাল পদার্থগুলিকে যুক্ত করে বড় করতে এবং সঙ্গে সঙ্গে থিতিয়ে পড়তে সাহায্য করতে ফিটকিরি বা Alum ব্যবহার করা হয়। তৃতীয় ধরণের কঠিন পদার্থ কিন্তু জলে দ্রবীভূত অবস্থাতেই থাকে এবং এই ধরণের কঠিন পদার্থ জলপরিশোধন কেন্দ্রে সাধারণত অপসারিত হয়না।

Source: Aparajito sahityopatra: Jal Bisesh sankhya, Jan-June, 2008

सम्पर्क


অরুণাভ মজুমদার
অবসরপ্রাপ্ত ডিরেকটর, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ এন্ড হাইজিন


Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading