উষ্ণায়ন ও মানুষের একটাই স্বপ্ন


পৃথীবীর উষ্ণায়ন সম্পর্কে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। আবহমন্ডল ও মহাসাগরে জলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের জলস্তরে বৃদ্ধি - এই সমস্ত কিছুই তা প্রমাণ করে। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যে মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমান বাড়ার জন্যই বাড়ছে তা আর এখন বলার অপেক্ষা রাখে না। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রধান উত্স শক্তির ব্যবহার। এখনো পর্যন্ত আমাদের শক্তি সম্পদের ব্যবহার মূলত জীবাশ্ম জ্বলানি। ভেবে চিন্তে সঠিকভাবে সুপরিকল্পিত কোনো পদক্ষেপ না নিলে আগামী আরো কয়েক দশক পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানির এই আধিপত্য বজায় থাকেই যাবে

1972 সালে পরিবেশ সচেতন মানুষের মুখে 5 জুনের স্টকহলম বৈঠকে বিশ্বব্যাপী দূষণ সংক্রান্ত আলোচনাতে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণায়নের কথা ভীষণভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। গুরুত্ব দেওয়া হয় তার প্রধান কারণ হল - গ্রিনহাউস গ্যাস এর নির্গমন। এই গ্রিনহাউস গ্যাস, মানুষের অতি আধুনিক জীবনযাত্রা ও বিভিন্ন প্রকার কর্মকান্ডের ফলে এত বেশী পরিমাণে বায়ুমন্ডলে মিশছে যে তার ফলে আবহাওয়ায় বেশ বড় রকমের পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। যে জলবায়ু বছরের পর বছর ধরে আমাদের জীবনধারণের জন্য বিভিন্ন পরিষেবার সুবন্দোবস্থ করে এসেছে, মানব সভ্যতা তার অনিয়ন্ত্রিত কাজের জন্য সেই জলবায়ুর ওপর কুপ্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এই ভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পৃথিবীর তাপমাত্রা / উষ্ণতা বেড়ে অস্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছুবে তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই । তার সাথে উষ্ণ প্রবাহ, নতুন গতি প্রকৃতির বায়ু প্রবাহ এবং ঝড় - ঝঞ্জা, কোন কোন অঞ্চলে প্রবল খরা হবে, আবার কোথাও বা ভীষণ বন্যা, হিমবাহ গলে গিয়ে জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ইন্টার গর্ভমেন্টাল প্যানেল চতুর্থ অ্যাসেসমেন্ট রির্পোট-এ বলা হয়েছে - পৃথীবীর উষ্ণায়ন সম্পর্কে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। আবহমন্ডল ও মহাসাগরে জলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের জলস্তরে বৃদ্ধি - এই সমস্ত কিছুই তা প্রমাণ করে। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যে মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমান বাড়ার জন্যই বাড়ছে তা আর এখন বলার অপেক্ষা রাখে না। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রধান উত্স শক্তির ব্যবহার। এখনো পর্যন্ত আমাদের শক্তি সম্পদের ব্যবহার মূলত জীবাশ্ম জ্বলানি। ভেবে চিন্তে সঠিকভাবে সুপরিকল্পিত কোনো পদক্ষেপ না নিলে আগামী আরো কয়েক দশক পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানির এই আধিপত্য বজায় থেকেই যাবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ইন্টার গর্ভমেন্টাল প্যানেল চতুর্থ অ্যাসেসমেন্ট রির্পোট বিশ্বকে সর্তক করেছে যে এইসব গ্যাসের অতিমাত্রায় নির্গমনের ফলে আজ যে পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা হয়েছি, তার ফলে এমন বিপর্যয় পৃথিবীতে নামবে যে তা থেকে মানুষের আর বাঁচার কার্যত কোন পথ খুঁজে পাবে না।

শিল্প বিপ্লবের পর থেকে মানুষের জীবনযাত্রা ও কাজকর্মের আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। কল কারখানায় মেশিন নির্ভর আমাদের জীবনের বিভিন্ন রকমের কাজের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রতিনিয়ত, বলা ভাল ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শিল্পায়ন যেমন বেড়েছে, তেমনি কৃষি জমির ব্যবহারের ধারাও ক্রমে বদলেছে, এই সকল বিভিন্ন প্রকার কারণের জন্য গ্রিণহাউস নির্গমণ বেড়ে চলেছে। প্রযুক্তির সাহায্যে শক্তি সরবরাহ ও বন্টনের দক্ষতা বাড়াতে, কয়লার পরিবর্তে গ্যাস ব্যবহার, সৌরশক্তি, জলবিদ্যুত, বায়ুচালিত, ভূর্গভস্থ উত্তাপ বাড়াতে হবে। ব্যবহার ধারা অনুসরণে সম্পদ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার নিয়ন্ত্রন নেই কোন দেশের বা মহাদেশের।

সে কারণে বার বার এক পৃথিবীর কথা (Only One Earth ) উঠে এসেছে 1974 সালের 5 জুনের প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের পর থেকেই। তারপর 1992 তে - Only one Earth, Care Share, 1994 তে - One Earth One Family, 1996 এ - Our Earth, Our Habitat, Our Home, 1999 তে - Our Earth- Our Future- Just Save it, 2002 তে - Give Earth a Chance এবং এ বছর 2015 তে বলা হচ্ছে - Seven Billion Dreams, One Planet- Consume with Care.

অর্থাত 700 কোটি মানুষের একটাই স্বপ্ন — একটাই গ্রহ, সকলকেই প্রাকৃতিক সম্পদ, উত্পাদিত সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করে গ্রহকে ভালোভাবে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অনুপযোগী যেন না করে তোলে - নতুবা আবার বলতে হবে যে, এমন বিপর্যয় নামবে যে তা থেকে মানুষের আর বাঁচার কোন পথ থাকবে না। আমাদের এটা খেয়াল রাখতে হবে, সর্তক হতে হবে যে, পৃথিবী এক মৃত্যু পুরীতে যেন পরিণত না হয়।

सम्पर्क


ড. অরুণকান্তি বিশ্বাস
প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা ও ডেপুটি ডাইরেক্টর, ন্যাশানাল এনভায়রনমেণ্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী), কলকাতা


Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading